বিসমিল্লাহির রহমানির রাহিম ………..আসসালামু আলাইকুম আশা করি সবাই ভাল আছেন আমিও ভাল আছি আজকে আমি আপনাদের সামনে হাজির হয়েছি রূপালী ব্যাংক লিমিটেড এর লোন পদ্ধতি নিয়ে।প্রিয় ভিজিটর, আজকের লেখা জুড়ে আমি আপনাদের সাথে আলোচনা করবো, রূপালী ব্যাংক লিমিটেড এর বিভিন্ন প্রকার লোন পদ্ধতি, লোনের সুদের হার ও মেয়াদ, আবেদনের নিয়ম, প্রয়োজনীয় কাগজপত্র ও অগ্রণী ব্যাংক লিমিটেড লোন সম্পর্কিত অন্যান্য বিষয় নিয়ে বিস্তারিত।বাংলাদেশের রাষ্ট্রায়ত্ত বাণিজ্যিক ব্যাংকগুলোর মধ্যে রূপালী ব্যাংক লিমিটেড (Rupali Bank Limited) অন্যতম। ১৯৭২ সালে প্রতিষ্ঠিত এই সরকারি বাণিজ্যিক ব্যাংকটি সকল প্রকার ব্যাংকিং সুবিধা, ডিপিএস, বীম সেবা প্রদানের পাশাপাশি বিভিন্ন ধরনের লোন বা ঋণ সুবিধা প্রদান করে থাকে।বাংলাদেশ রূপালী ব্যাংক লিমিটেড একটি রাষ্ট্রায়ত্ত বাণিজ্যিক ব্যাংক।রূপালী ব্যাংকের মোট শাখা ৫৪৭টি। আমানত হিসাব ২৮ লাখ ৪৫ হাজার ২২৩টি, ঋণ হিসাব ১ লাখ ১২৭৩টি, এটিএম বুথ ৪৪টি।রূপালী ব্যাংক সূত্রে জানা গেছে, গত ৫ বছরে রূপালী ব্যাংক প্রায় ৭ লাখ মানুষকে ব্যাংকিং সেবার আওতায় এনেছে। এদের মধ্যে কৃষক অতি দরিদ্র জনগণ, বেকার নারী-পুরুষ, গামের্ন্টস কর্মী, পথ ও শ্রমজীবী শিশু ও স্কুল শিক্ষার্থী রয়েছে।
রূপালী ব্যাংক ব্যবসায়ী লোন:
বাংলাদশ রূপালী ব্যাংক লিমিটেড ট্রেডিং এবং উৎপাদন কার্যক্রম পরিচালনার জন্য ব্যবসায়ী লোন প্রদান করে থাকে। আপনি যদি কোন টেডিং কিংবা উৎপাদন কারযক্রমের সাথে জড়িত ব্যবসায় পরিচালনা করে থাকেন তবে বাংলাদেশ রূপালী ব্যাংক লিমিটেড হতে সর্বোচ্চ ৫ কোটি টাকা পর্যন্ত ব্যবসায়ী লোন সুবিধা পেতে পারেন।
- লোনের পরিমাণ কমপক্ষে ৫ কোটি টাকা
- লোনের মেয়াদ – ব্যাংকের উপর নির্ভরশীল
- সুদের হার – ৯% (পরিবর্তনশীল)
- নিরাপত্তা – একক মালিকানার ক্ষেত্রে সম্পত্তির বিক্রয়ের ৭৫% হিসাবে এবং সহ-ভাগ মালিকানার ক্ষেত্রে সম্পত্তির বিক্রয়ের ৫০% হিসাবে ঋণ দেওয়া হয়ে থাকে।
- কারা কারা আবেদন করতে পারবে – বাংলাদেশের সকল ক্ষুদ্র ও মাঝারি উদ্যোক্তা
- লোন আবেনদ ফি – ২০০ টাকা
- অনন্যা ফি – ডকুমেন্ট ফি, সি আই বি ফি, স্ট্যাম্প ফি।
রূপালী ব্যাংক মাঝারি লোন:
প্রিয় ভিজিটর আপনার কি মাঝারি ব্যবসার জন্য লোণের প্রয়জন তাহলে বাংলাদেশ রূপালী ব্যাংকের মাধ্যমে আপনি ও মাঝারি ব্যবসার জন্য ঋণ সুবিধা পেতে পারেন। যারা মাঝারি ব্যবসার সাথে জড়িত কিংবা মাঝারি ব্যবসা শুরু করতে চান তাদের কে রূপালী বাংক দিচ্ছে সর্বোচ্চ ৭৫ কোটি টাকা পর্যন্ত ঋণ সুবি্ধা। মাঝারি ঋণ পেতে যা যা প্রয়জন তা হল-
- লোনের পরিমাণ কমপক্ষে ৭৫ কোটি টাকা
- লোনের মেয়াদ – সর্বোচ্চ ১২০ মাস মেয়াদী ঋণ প্রদান করে থাকে (ব্যাংকের উপর নির্ভরশীল)
- রূপালী ব্যাংকে মাঝারি ঋণের সুদের হার ৯% (পরিবর্তনশীল)
- সকল মাঝারি উদ্যোক্তাগন আই ঋণ নিতে করতে পারবেন
- মাঝারি ঋণের জন্য আবেদন ফি পরিমাণ ২০০ টাকা
- মাঝারি ঋণের অনন্যা যে সকল ক্ষেত্রে ফি প্রয়জন তা হল ডকুমেন্ট ফি, সি আই বি ফি, স্ট্যাম্প ফি ইত্যাদি।
রূপালী ব্যাংক পেশাজীবী লোন:
তরুণ উদ্যোক্তা তৈরির জন্য কাজ করছে বাংলাদেশ রূপালী ব্যাংক। যারা নতুন কোন ব্যবসা বা কোন আর্থিক কাজ পরিচালনা করতে চায় কিন্তু অর্থের অভাবে করতে পারে না বা লোণের প্রয়জন তাদের কে রূপালী ব্যাংক ঋণ হিসাবে দিচ্ছে সর্ববোচ্চ ১০০ লাখ টাকা। রূপালী ব্যাংক যে যে শর্তে এই ঋণ দিচ্ছে তা হল-
- পেশাজীবী ঋণের পরিমাণ হতে হবে সর্বনিম্ন ১০০ লাখ পর্যন্ত।
- ঋণের মেয়াদকাল সর্বোচ্চ ৬০ মাস পর্যন্ত হয়ে থাকে। (ব্যাংকের উপর নির্ভরশীল)
- সুদের হার ৯% তবে ব্যাংক চাইলে সুদের হার কমাতে বা বাড়াতে পারে।
- পেশাজীবী ঋণের ক্ষেত্রে নিরাপত্তা হিসাবে শিক্ষাগত বা পেশাদার প্রশাংসাপত্র এবং ৩য় পক্ষ হিসাবে কাউকে প্রয়জন হবে।
- পেশাজীবী ঋণের ক্ষেত্রে আবেদন ফি হিসাবে ২০০ টাকা প্রয়জন হবে এবং অনন্যা যে সকল ক্ষেত্রে ফি প্রয়জন হবে তা হল ডকুমেন্ট ফি, সি আই বি ফি, স্ট্যাম্প ফি ইত্যাদি।
সহজ লোন:
বাংলাদেশ রূপালী ব্যাংক লিমিটেড কুটির শিল্প এবং উৎপাদন কার্যক্রম পরিচালনার জন্য লোন দিয়ে থাকে। যাদের কুটির শিল্প কিংবা উৎপাদন কার্যক্রম পরিচালনার ক্ষেত্রে অর্থের প্রয়জন তাদের কে রূপালী ব্যাংক সহজ শর্তে দিচ্ছে সর্বোচ্চ ১০ লাখ টাকা পর্যন্ত ঋণ সুবিধা। ঋণ উত্তলনের ক্ষেত্রে যে সকল শর্তে রয়েছে তা হল-
- সর্বোচ্চ ১০ লাখ টাকা পর্যন্ত ঋণ উত্তোলন করা যাবে।
- সহজ ঋণের মেয়াদকাল সর্বোচ্চ ৪৮ মাস তবে ব্যাংক চাইলে এই সময় কমাতে বা বাড়াতে পারবে।
- এই রিনে সুদের হার ৯% (পরিবর্তনশীল)
- সহজ লোনে ব্যাংক নিরাপত্তা হিসাবে বাক্তিগত কিংবা ৩য় পক্ষের কোন ব্যক্তির বাংকে ৫০ হাজার টাকা পর্যন্ত জমা থাকতে হবে।
- সহজ ঋণ পেতে আবেদনের জন্য আবেদন ফি ২০০ টাকা প্রয়জন হবে।
- এই ঋণ পেতে অনন্যা যে সকল ক্ষেত্রে ফি প্রজন তা হল- ডকুমেন্ট ফি, সি আই বি ফি, স্ট্যাম্প ফি, আইনি ফি এবং মূল্যায়ন ফি ইত্যাদি।
সুলভ ঋণ:
ক্ষুদ্র শিল্প ও উৎপাদন ভিত্তিক কার্যক্রম পরিচালনার লক্ষে রূপালী ব্যাংক উদ্যোক্তাদের সুলভ ঋণ দিয়ে থাকে। আমরা যারা ক্ষুদ্র শিল্প ও উৎপাদন ভিত্তিক কার্যক্রম পরিচালনার আর্থিক সংকটে রয়েছি কিংবা ক্ষুদ্র শিল্প ও উৎপাদন ভিত্তিক কার্যক্রম চালু করার জন্য আমাদের যাদের অর্থের প্রয়জন তাদের কে বাংলাদেশ রূপালী ব্যাংক লিমিটেড দিচ্ছে সর্বোচ্চ ২০০ লাখ টাকা পর্যন্ত সুলব ঋণ সুবিধা। এই ঋণ গ্রহনের ক্ষেত্রে যে সকল শর্ত রয়েছে তা হল-
- সুলভ ঋণের ক্ষেত্রে সর্বোচ্চ ২০০ লাখ টাকা ঋণ নেওয়া যাবে।
- সুলভ লোনের মেয়াদকাল সর্বোচ্চ ৯৬ মাস(পরিবর্তনশীল)
- এই ঋণের ক্ষেত্রে সুদের হার ৯% তবে ব্যাংক চাইলে কমাতে বা বাড়াতে পারে।
- সুলভ লোনের জন্য আবেদন ফি হিসাবে ২০০ টাকা ফি হিসাবে দিতে হবে। অনন্যা যে সকল ক্ষেত্রে ফি প্রয়জন হবে তা হল- ডকুমেন্ট ফি, সি আই বি ফি, স্ট্যাম্প ফি ইত্যাদি।
বাংলাদেশ বিদ্যুৎ উন্নয়ন বোর্ড কর্মচারী হাউজ বিল্ডিং লোন:
বাংলাদেশ বিদ্যুৎ উন্নয়ন বোর্ডের স্থায়ী চাকুরীজীবী কর্মকর্তা-কর্মচারীদের বাড়ি কিংবা ফ্ল্যাট কেনা ও নির্মাণের জন্য রূপালী ব্যাংক লিমিটেড সর্বোচ্চ ৭৫ লাখ টাকা পর্যন্ত লোন প্রদান করে থাকে। যা মাসিক কিস্তিতে পরিশোধযোগ্য যা সেবিংস একাউন্ট কিংবা স্যালারি একাউন্ট থেকে কেটে নেওয়া হবে এবং এই লোনের মেয়াদ সর্বোচ্চ ২০ বছর।
সরকারি কর্মচারী হোম লোন:
আপনি যদি একজন সরকারি চাকরিজীবী হয়ে থাকেন এবং একটি বাড়ি বানাতে কিংবা ফ্ল্যাট কিনতে চান তাহলে রূপালী ব্যাংক সরকারি চাকরিজীবী হোম লোনের জন্য আবেদন করতে পারেন। সর্বোচ্চ ২০ বছর মেয়াদে মাসিক কিস্তিতে পরিশোধযোগ্য। মোট খরচের সর্বোচ্চ ৯০ শতাংশ পর্যন্ত লোন প্রদান করে থাকে। তবে আবেদন কারীর বয়স সর্বোচ্চ ৫৮ বছর বা তার বেশি হওয়া যাবে না। অংশীদার থাকলে সর্বোচ্চ ১৫ জন অংশীদার থাকতে পারবে।
কারা আবেদন করতে পারবেন:
১) গণপ্রজাতন্ত্রী বাংলাদেশ সরকারের আওতাধীন মন্ত্রণালয়/ বিভাগ/অধিদপ্তর/পরিদপ্তর/কার্যালয়সমূহে শুধুমাত্র স্থায়ী পদের বিপরীতে নিয়োগপ্রাপ্ত(বেসামরিক/সামরিক) কর্মকর্তা/কর্মচারী।
২) বাংলাদেশ জুডিসিয়াল সার্ভিসে স্থায়ীভাবে নিয়োগপ্রাপ্ত সদস্যগণ সরকারি কর্মচারী হিসাবে গণ্য হবেন এবং এই নীতিমালার আওতাভুক্ত হবেন।
৩) ঋণ প্রাপ্তির সর্বোচ্চ বয়সসীমা ৫৮ বছর।
8) আবেদনকারীর মাসিক বেতন-ভাতা Online/EFT পদ্ধতির আওতায় আসতে হবে।
কারা আবেদন করতে পারবেন না:
১) রাষ্ট্রায়ত্ত্ব ও স্বায়ত্ত্বশাসিত প্রতিষ্ঠান, রাষ্ট্রীয় মালিকানাধীন কোম্পানীতে নিযুক্ত কর্মচারীগণ এই ঋণ সুবিধার আওতাভুক্ত হবেন না।
২) চুক্তিভিত্তিক, খন্ডকালীন ও অস্থায়ীভিত্তিতে নিযুক্ত কোন কর্মচারী এই ঋণ পাওয়ার যোগ্য হবেন না।
৩) কোন সরকারি কর্মচারীর বিরুদ্ধে বিভাগীয় মামলা রজু এবং দুর্নীতি মামলার ক্ষেত্রে চার্জশিট দাখিল হলে মামলার চূড়ান্ত নিস্পত্তি না হওয়া পর্যন্ত এ নীতিমালার আওতায় ঋন গ্রহণের জন্য বিবেচনা হবেন না।
আবেদনকারীর জন্য দিক নির্দেশনা:
১) আবেদনকারীকে রূপালী ব্যাংক লিমিটেড এর ওয়েব সাইটে গিয়ে প্রাথমিকভাবে ট্র্যাকিং নম্বর সংগ্রহ করার জন্য অনলাইনে আবেদন ফরম পূরণ করতে হবে।
২) অনলাইন আবেদন ফরম পূরণ করলে তাকে একটি অটো জেনারেটেড ট্র্যাকিং নম্বর প্রদান করা হবে যা ডাউনলোড করে প্রিন্টআউট বের করতে হবে।
৩) অতঃপর আবেদনকারীকে রূপালী ব্যাংকের ওয়েব পেইজ থেকে মূল আবেদন ফরম, ঋণের প্রাপ্যতা সংক্রান্ত প্রত্যয়ন, বেতন-ভাতা EFT এর মাধ্যমে প্রেরণ সংক্রান্ত প্রত্যয়ন ও চেকলিস্ট সংগ্রহ করতে হবে।
৪) পরিশেষে প্রাথমিক আবেদনপত্র (ট্র্যাকিং নম্বরসহ), মূল আবেদন পত্র(যথাযথ পূরণকৃত), সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের নিকট হতে ঋণের প্রাপ্যতা সংক্রান্ত প্রত্যয়ন, বেতন-ভাতা EFT এর মাধ্যমে প্রেরণ সংক্রান্ত প্রত্যয়ন এবং চেকলিস্টে উল্লেখিত প্রয়োজনীয় সকল কাগজপত্রসহ আবেদনকারী যে শাখা বরাবর অনলাইনে আবেদন করেছেন সে শাখায় দাখিল করবেন।
৫) সরকারী কর্মচারীদের জন্য বাড়ী নির্মাণ/ফ্লাট ঋণের সাথে সংশ্লিষ্ট যে কোন বিষয়ে হেল্পডেস্ক কর্মকর্তাদের সাথে প্রয়োজনে যোগাযোগ করা যেতে পারে। হেল্পডেস্ক কর্মকর্তাদের নাম, পদবী ও ফোন নম্বরসমূহ রূপালী ব্যাংকের ওয়েবসাইটে দেয়া আছে।
৬) ঋণের আবেদন প্রক্রিয়াকরণের জন্য রুপালী ব্যাংকের সংশ্লিষ্ট শাখায় আপনার ব্যাংক হিসাবটি খুলুন।
শেষকথা:
রূপালী ব্যাংক লিমিটেড বাংলাদেশ বিভিন্ন পেশা, শ্রেণী, এলাকা, ও প্রজেক্ট ভিত্তিক সল্প ও দীর্ঘমেয়াদী ঋণ প্রদান করে থাকে। তবে লোনের ধরন ভেদে বিশেষ নিয়ম ও যোগ্যতা থাকা আবশ্যক। আপনি কোন ধরনের লোন বা ঋণ পেতে চান সে বিষয়ে আপনার নিকটস্থ রূপালী ব্যাংক লিমিটেড শাখায় যোগাযোগ করুন। প্রিয় বন্ধুরা আশা করি আজকের এই পোষ্ট আপনাদের সবার ভালো লাগবে। ভাল লাগলে অবশ্যই সবার মাঝে শেয়ার করবেন ।আর আপনারা যদি এই পোস্টের মাধ্যমে লোনের বিভিন্ন তথ্য জানতে চান তাহলে নিয়মিত আমাদের এই ওয়েবসাইট ভিজিট করুন ।এবং আমাদের সাথেই থাকুন ধন্যবাদ।