মুসলমানদের কাছে আরবী বছর অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ, তার মধ্যে রমজান মাসকে কোরআনের বসন্ত কাল বলা হয়, কারণ এ মাসেই কোরআন নাযিল হয়েছে এবং হাজার মাস অপেক্ষা শ্রেয়তর রাত্রি শবে কদর এ মাসেই বিদ্যমান এবং সর্বোপরি রহমত, বরকত ও মাগফিরাতের মাস পবিত্র রমজান। এই মাস আত্মশুদ্ধির মাস এবং মহান আল্লাহর নৈকট্য অর্জনসহ সারা জীবনের জন্য পাথেয় ও পরকালের সম্বল অর্জনের মাস। পবিত্র রমজানের প্রেমময় এই মহাসাগরে ভ্রমণ এবং এই মহাসাগরের মনি-মুক্তা ও অন্য সব দামী সম্পদ আহরণের জন্য যোগ্যতা অর্জন জরুরি। ইহলোক ও পরলোক মিলে যে অসীম জীবন- রমজানেই তার পাথেয় সংগ্রহ করে নেয়ার এমন মহাসুযোগকে যাতে যথাযথভাবে কাজে লাগানো যায় সে জন্য জরুরি জ্ঞান ও সচেতনতা অর্জনে মহান আল্লাহর কাছেই তৌফিক কামনা করছি।
এ মাসেই মানুষ ও জিন জাতির মুক্তির সনদ কুরআন মজীদ একত্রে লাওহে মাহফূয থেকে প্রথম আসমানে বাইতুল ইযযতে অবতীর্ণ হয় এবং রাসূলে কারীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর নিকট সর্বপ্রথম এ মাসেই ওহী অবতীর্ণ হয়। কুরআন মজীদে ইরশাদ হয়েছে- (তরজমা) ‘রমযান মাসই হল সে মাস যাতে নাযিল করা হয়েছে কুরআন, যা মানুষের জন্য হেদায়াত এবং সত্যপথযাত্রীদের জন্য সুস্পষ্ট পথনির্দেশ। -সূরা বাকারা ১৮৫
রমজান মাস সারা বছরের মধ্যে শ্রেষ্ঠ
নবীজি (সা.) বলেন, ‘আল্লাহর কসম! মুসলমানদের জন্য রমজানের চেয়ে উত্তম কোনো মাস আসেনি এবং মুনাফিকদের জন্য রমজান মাসের চেয়ে অধিক ক্ষতির মাসও আর আসেনি। কেননা মুমিনরা এ মাসে (সারা বছরের জন্য) ইবাদতের শক্তি ও পাথেয় সংগ্রহ করে। আর মুনাফিকরা তাতে মানুষের উদাসীনতা ও দোষত্রুটি অন্বেষণ করে। এ মাস মুমিনের জন্য গনিমত আর মুনাফিকের জন্য ক্ষতির কারণ।’ (মুসনাদে আহমদ, হাদিস : ৮৩৬৮)
রমজানের শেষ দশকের ফজিলত ও তাৎপর্য
পুরো রমজান মাসের অসংখ্য ফজিলত থাক সত্বেও রমজানের শেষ দশকের বিশেষ ফজিলত রয়েছে এবং আছে বেশ কিছু বৈশিষ্ট্য। এগুলো হল :
(১) এ দশ দিনের মাঝে রয়েছে লাইলাতুল কদর নামের একটি রাত। যা হাজার মাস থেকেও শ্রেষ্ঠ। যে এ রাতে ঈমান ও ইহতিসাবের সাথে ইবাদত-বন্দেগি করবে তার অতীতের পাপগুলো ক্ষমা করে দেয়া হবে।
(২) নবী করিম (সাঃ) এ রাতে ইবাদত-বন্দেগিতে বেশি সময় ও শ্রম দিতেন, যা অন্য কোন রাতে দেখা যেত না। যেমন মুসলিম শরীফে আয়েশা (রাঃ) বর্ণিত হাদিসে এসেছে যে, তিনি এ রাতে কোরআন তিলাওয়াত, জিকির, সালাত ও দোয়ার মাধ্যমে জাগ্রত থাকতেন এরপর সেহরি গ্রহণ করতেন।
(৩) রমজানের শেষ দশক আসলে রাসুলুল্লাহ (সাঃ) পরনের লুঙ্গি শক্ত করে নিতেন। রাত্রি জাগরণ করতেন এবং পরিবারের সকলকে জাগিয়ে দিতেন। যেমন বোখারি ও মুসলিমে আয়েশা (রাঃ) বর্ণিত হাদিসে এসেছে। তিনি এ দশদিনের রাতে মোটেই নিদ্রা যেতেন না। পরিবারের সকলকে তিনি এ রাতে ইবাদত-বন্দেগি করার জন্য জাগিয়ে দিতেন। রাসুলুল্লাহ (সাঃ) লুঙ্গি শক্ত করে নিতেন’ কথাটির অর্থ হল তিনি এ দিনগুলোতে স্ত্রীদের থেকে আলাদা হয়ে যেতেন।
(৪) এ দশদিনের একটি বৈশিষ্ট্য হল, রাসুলুল্লাহ (সাঃ) এ শেষ দশদিনে মসজিদে এতেকাফ করতেন। প্রয়োজন ব্যতীত তিনি মসজিদ থেকে বের হতেন না। লাইলাতুল কদরের গুরুত্ব আল্লাহ রাব্বুল আলামিন এ রাতকে সকল রাতের চেয়ে শ্রেষ্ঠত্বের মর্যাদা দিয়েছেন। তিনি তার কালামে এ রাতকে প্রশংসার সাথে উল্লেখ করেছেন। তিনি তাঁর কালাম সম্পর্কে বলতে যেয়ে এরশাদ করেন :—
রমজান মাস। আরবি মাসসমূহের মধ্যে সবচেয়ে বরকতময় ও মর্যাদাপূর্ণ মাস। এ মাসের গুরুত্ব ও বৈশিষ্ট্য অপরিসীম। দুনিয়ার কোনো সম্পদের সঙ্গে আল্লাহর এ অনুগ্রহের তুলনা চলে না। রমজানের আগমনে বিশ্বনবি অনেক আনন্দিত হতেন।