বিসমিল্লাহ রহমান রাহিম আশা করি সবাই ভাল আছেন আল্লাহর রহমতে আমিও ভাল আছি আজকে আমি আপনাদের সামনে হাজির হয়েছি নামাজ মুমিনের অন্যতম প্রধান ইবাদত। আল্লাহর পক্ষ থেকে বান্দার উপর আরোপিত সকল ইবাদতের মধ্যে নামাজ এমন একটি ইবাদত যা ব্যক্তিজীবনকে গড়ে তুলে ।নামাজকে কোরআনের ভাষায় সালাত বলে। সালাত শব্দের আভিধানিক অর্থ হলো দরুদ বা শুভকামনা, তাসবিহ বা পবিত্রতা বর্ণনা, রহমত তথা দয়া বা করুণা, ইস্তিগফার তথা ক্ষমা প্রার্থনা। মুমিন হিসেবে আর সমাজ জীবনে ব্যক্তি কে গড়ে তুলে সুবাসিত পুষ্প তুললে। নামাজের মাধ্যমেই জীবনের সর্বাঙ্গীন সফলতা লাভ করা যায়।ইসলামী শরীয়ত প্রত্যেক প্রাপ্ত বয়স্ক সুস্থ ব্যক্তির উপর দৈনন্দিন পাঁচ ওয়াক্ত নামাজ ফরজ করেছে।আলহামদুলিল্লাহ, আমি সালাতের ফযীলত, সালাতের হিফাযত এবং স্বেচ্ছায় সালাত পরিত্যাগকারী বা বিনা ওজরে সালাত নির্ধারিত সময়ের পরে আদায়কারীর বিধান সংবলিত পুস্তিকাটি সম্পর্কে অবহিত হয়েছি এবং উক্ত বিষয়ে পুস্তিকাটিকে উপযুক্ত পেয়েছি। তাই এর ব্যাপক প্রচার ও প্রকাশ হওয়া উচিৎ বলে মনে করি এবং আশা করি আল্লাহ এর মাধ্যমে পাঠকদেরকে উপকৃত করবেন।
নামায (নামাজ): সালাতের আঞ্চলিক নাম:
নামায শব্দটি ফার্সি: نماز শব্দ থেকে উদ্ভূত। আরবী صلاة (সালাত) শব্দের সমার্থকরূপে نماز (নামায/নামাজ) শব্দটি একাধারে উপমহাদেশীয় অঞ্চলের বাংলাদেশে বাংলা ভাষায়, ভারতে হিন্দি এবং পাকিস্তানে উর্দু ভাষায় একীভূত এবং বহুল প্রচলিত।
সালাতের শিক্ষা:
সালাত এক দিন, এক বছর বা এক যুগেরও নয়। সালাত প্রতিদিন শিখতে হয় এবং মৃত্যুর আগ মুহূর্ত পর্যন্ত সে শিক্ষা জারি থাকা উচিত। সালাত প্রতিক্ষণের সুস্থির অনুভব-উপলব্ধি, তিলাওয়াত-তাসবিহ, রুকু-সিজদার জন্য যে তৃষ্ণা তৈরি করে, মৃত্যুর পরও তা বাকি থেকে যায়। সালাতের ব্যবহারিক ও বাহ্যিক দিকগুলো স্বল্প সময়ে আয়ত্তে আনা যেতে পারে, তবে অভ্যন্তরীণ উন্নতির ক্রমধারা যা উপলব্ধি ও সূক্ষ্ম অনুভূতির জন্ম দেয়, তা আমৃত্যু শাণিত করতে হয়। তাই সালাত প্রতিষ্ঠা এবং অব্যাহত শিক্ষার ও অনুশীলনের বিষয়টিও অন্তহীন।
শাণিত ও শাশ্বত সালাত কেবল সালাতই নয়, তা মুমিনের বেঁচে থাকার হৃৎস্পন্দনও বটে। যখন একজন মুসল্লি বা নামাজি আন্তরিকভাবে সালাতে অভ্যস্ত হয়ে ওঠে, তখন এ সালাত আনুষ্ঠানিক ও লোক দেখানোর বিষয় থাকে না। বরং বেঁচে থাকার অবলম্বনে পরিণত হয়। আত্মার সঙ্গে আত্মজিজ্ঞাসা থাকে এবং প্রকৃত আত্মজিজ্ঞাসার সদুত্তর হলো আল্লাহর অস্তিত্বে বিশ্বাস করা। সেই মহান অস্তিত্বের সঙ্গে আধ্যাত্মিক সম্পর্ক বজায় রাখা ও ধারাবাহিকতা রক্ষার একমাত্র অবলম্বন হলো নিয়মিত সালাত আদায় করা এবং স্বীয় সালাতের পবিত্র প্রভাবে প্রভাবিত হয়ে পবিত্র জীবন যাপন করা। এটাই মূলত জীবনের সর্বক্ষেত্রে সালাত কায়েমের নামান্তর। এভাবেই সালাত একজন মুসল্লির জীবনকে পরিশীলিত ও পরিমার্জিত করে এবং সালাতবিহীন জীবনের হাহাকার দূর করতে সালাতের বিকল্প আর কিছু নেই।
সালাতের সমন্বিত রূপ হচ্ছে অঙ্গসঞ্চালন (যেমন রুকু, সিজদা ইত্যাদি) কোরআন ও তাসবিহ পঠন, অন্তরকে শক্তির প্রতি সমর্পণ। উপরিউক্ত তিনটি বিষয়ের সমন্বয়কে পূর্ণ সালাত বলে।
ইসলামের অন্যতম স্তম্ভ হলো সালাত। রাসুল (সা.) বলেন, ‘যে সালাত প্রতিষ্ঠা করে, সে তার পুরো দীন (জীবনবিধানকে) প্রতিষ্ঠা করে; যে সালাত বিনষ্ট করে, সে পুরো দীনকেই বরবাদ করে দেয়।’ (বুখারি)। কোরআন ও হাদিসে সালাত পড়া নয়, প্রতিষ্ঠার নির্দেশ দেওয়া হয়েছে।
সালাত হিসাব করেই সময়ানুবর্তিতার সঙ্গে পড়া আবশ্যক। কেননা, কেয়ামতের দিন সবার আগে সালাতেরই হিসাব নেওয়া হবে। (বুখারি ও মুসলিম)। সালাত পবিত্রতার প্রতীক ও জান্নাতের চাবিকাঠি। (বুখারি ও তিরমিজি)। রাসুল (সা.) বলেন, ‘যে ব্যক্তি সালাত আদায় করে না, ইসলামে তার কোনো অংশ নেই। যে ব্যক্তি ইচ্ছাকৃত সালাত ত্যাগ করে, সে জাহান্নামি।’ রাসুল (সা.) বলেন, ইমান ও কুফরের মধ্যবর্তী দেয়াল হলো সালাত। সালাত মানবজীবনকে নিয়ন্ত্রণ করে বা নিয়ন্ত্রিত জীবনযাপন শিক্ষা দেয়। মানুষ যা দেখে তা শেখে, তা ভাবে। তাই দৃষ্টি নিয়ন্ত্রণ মনোনিয়ন্ত্রণের জন্য অপরিহার্য; এর দ্বারা কর্মও নিয়ন্ত্রিত হয়। এ জন্যই সালাতে দৃষ্টি নিয়ন্ত্রণ অতিগুরুত্বপূর্ণ বিষয়।
সালাত পরিত্যাগকারীর ইহকালীন বিধান:
সালাত আদায়কারী মুসলিম নারীর সাথে বেনামাযীর বিয়ে দেওয়া নাজায়েয। তার অভিভাবকত্ব বিলুপ্ত, তার জবাহকৃত গোশত খাওয়া নাজায়েয, সে তার কোনো আত্মীয়ের সম্পত্তির অংশ পাবে না। তেমনি তার আত্মীয়গণও তার থেকে কোনো অংশের অধিকারী হবে না, মারা গেলে তার জানাযা আদায় করা যাবে না, তার ক্ষমা ও করুণার জন্য দো‘আ করা যাবে না, মুসলিমদের কবরস্থানে দাফন করা হবে না এবং সে দীনী ভাই হিসেবে গণ্য হবে না, বরং তার থেকে বিমুখ হওয়া ও তার সাথে ভ্রাতৃত্ব বন্ধন ছিন্ন করা ওয়াজিব। (শাইখ মুহাম্মাদ ইবন উসাইমীনের “সালাত পরিত্যাগকারীর বিধান” নামক রিসালা থেকে সংকলিত)
সালাত পরিত্যাগকারীর পরকালীন বিধান:
বেনামাযীকে কবরে শাস্তি দেওয়া হবে, যেমন সহীহ বুখারীতে নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের এক স্বপ্নের বর্ণনায় রয়েছে: “তিনি চিৎ অবস্থায় শায়িত এক ব্যক্তির নিকট আসলেন, এমতাবস্থায় একটি পাথর হাতে দাঁড়িয়ে রয়েছে অন্য একজন, অতঃপর সে উক্ত পাথর দিয়ে তার (শায়িত ব্যক্তির) মাথায় আঘাত করছে, যার ফলে তার মাথা চূর্ণ-বিচূর্ণ হয়ে যাচ্ছে, পাথরটি ছিটকে দূরে চলে যাচ্ছে, পুনরায় সে দৌড়ে গিয়ে পাথরটি নিয়ে ফিরা মাত্র উক্ত ব্যক্তির মাথা পূর্বের ন্যায় ঠিক হয়ে যাচ্ছে। পুনরায় ঐ ব্যক্তি আপন স্থানে ফিরে তাকে ঐ ভাবেই (শাস্তি) দিচ্ছে যেভাবে প্রথমবার দিয়েছিল।
সালাতুজ্জুম’আ:
জুম’আ বার (শুক্রবার-Friday) জুম’আর সালাত (নামায) আদায় করতে হয় । জুম’আর সালাতে আলাদা কোনো ওয়াক্ত নেই। যোহরের পরিবর্তে “ইয়ামুল জুমুয়া” অর্থাৎ শুক্রবার দিন (Friday) দ্বিপ্রহরে যে বিশেষ নামায আদায় করা হয় তাকে “সালাতুজ জুম’আ” বলা হয়।
বি:দ্র: আলহামদুলিল্লাহ! আধুনিক জামানায় সময় নির্ণয়ে যান্ত্রিক ঘড়ির প্রচলন হওয়ায় এবং নিয়মিত ওয়াক্তমাফিক আযান প্রচারিত হওয়ায় নামাযের ওয়াক্ত জানা অতি সহজতর হয়েছে।
জামায়াতে নামাজের জন্য দৌঁড়ে যাওয়া :
জামায়াতে অংশ নেয়ার জন্য আমাদের অনেকে আবেগ তাড়িত হয়ে মসজিদে দৌঁড়ে যেতে চেষ্টা করি। এটা আল্লাহর রাসাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম পছন্দ করেননি। শরীয়াহ সম্মত বিধান হচ্ছে: পর্যাপ্ত সময় হাতে নিয়ে স্বাভাবিক নিয়মে ধিরস্থির ও শান্তভাবে হেঁটে গিয়ে যত রাকায়াত পাওয়া সম্ভব তত রাকায়াতের জামাতে শরিক হওয়া উচিৎ।
মানুষ ডিঙিয়ে সামনের কাতারে যাওয়া:
সামনের কাতারে নামাজ পড়লে সওয়াব বেশি। হয়তো এ কারণে সাধারণত: জুমা’আবার কিংবা পবিত্র রমজান মাসের তারাবিহ কিংবা ঈদের নামাজে এসে একদল মানুষ চাপাচাপি করে সামনে গিয়ে বসে। অনেক সময় জায়গা না থাকা সত্ত্বেও একজন আরেকজনের গায়ের ওপর বসে পড়ার উপক্রম করে থাকে। এতে আরেক মুসল্লির কষ্ট হয় যা শরীয়াহ সম্মত নয়।