বিসমিল্লাহির রহমানির রাহিম
প্রিয় ভিউয়ার্স আসসালামু আলাইকুম আশা করি সবাই ভাল আছেন ।আমিও ভাল আছি ।আজকে আমি আপনাদের সামনে হাজির হয়েছি মুনীর চৌধুরী এর জীবনী নিয়ে ।যারা মুনীর চৌধুরী এর জীবনী খুঁজছেন তাদেরকে আমার এই ওয়েবসাইটে স্বাগতম।আমি আজকে আপনাদের সাথে মুনীর চৌধুরী এর জীবনী নিয়ে আলোচনা করব।আশা করছি আজকের এই আলোচনা আপনাদের সবার ভালো লাগবে।
মুনীর চৌধুরী এর জীবন নিয়ে কিছু কথা:
বাংলাদেশ, বাঙালি ও বাংলাভাষা, সাহিত্য,সংস্কৃতির সমৃদ্ধিসাধন এবং জাগরণ-ইতিহাসে সাহিত্যিক-বুদ্ধিজীবী শহিদ মুনীর চৌধুরীর কীর্তি সুবিদিত। তাঁর সৃজনশীল ও মননধর্মী সাহিত্যনির্মাণ এবং জীবনঘনিষ্ঠ শিল্পমানস গঠনে সক্রিয় ছিল পারিবারিক, প্রাতিষ্ঠানিক, আর্থসামাজিক, রাষ্ট্রিক ও বৈশ্বিক স্তরবহুল ঘটনাপ্রবাহ। সমকাল, ইতিহাস, ঐতিহ্য, পুরাণ ও মিথাশ্রয়ী জীবনভাবনা তাঁকে করেছে অসাম্প্রদায়িক, উদার মানবিক ও বস্ত্তবাদী শিল্পস্রষ্টা। তীক্ষন মননের সঙ্গে সম্পৃক্ত ছিল সূক্ষ্ম রসবোধ, যা তাঁর সাহিত্যকর্মকে করেছে প্রাণবমত্ম এবং ভিন্নমাত্রিক। তিনি এদেশের আধুনিক নাট্যকার, সফল অনুবাদক, বিজ্ঞ গবেষক-প্রাবন্ধিক এবং নিপুণ গল্পকার। তবে শেষোক্ত পরিচয়কে খানিকটা আড়াল করে অধিক সমুজ্জ্বল হয়েছে তাঁর নাট্যচর্চা-সম্পর্কিত কার্যক্রম। তিনি একই সঙ্গে নাট্যকার, অভিনেতা, নাট্যনির্দেশক ও নাট্যসংগঠক। বিদগ্ধ এই নাট্যজনের নাটক বর্তমান প্রজন্মের কাছে কীভাবে গৃহীত ও চর্চিত হচ্ছে, সেটাই আজকের বিবেচ্য এবং আলোচ্য বিষয়। আমরা আলোচনার সূচনা করব তাঁর সান্নিধ্যে কারা নাট্যচর্চায় উদ্বুদ্ধ হয়েছেন, স্বাধীনতা-উত্তরকালে তাঁর নাটক কীভাবে গঠিত, অভিনীত ও মূল্যায়িত হচ্ছে ইত্যাদি প্রসঙ্গ দিয়ে।
মুনীর চৌধুরীর জন্ম:
বাংলাদেশের আধুনিক সাহিত্যের অন্যতম পথিকৃৎ মুনীর চৌধুরী 1925 খ্রিস্টাব্দে 27 নভেম্বর পিতার কর্মস্থল মানিকগঞ্জ শহরে জন্মগ্রহণ করেন তিনি ছিলেন একাধারে বরেণ্য শিক্ষাবিদ অসাধারণ বক্তা সৃজনশীল ও নাট্যকার ভাষা আন্দোলনের প্রেক্ষাপটে লেখা অসাধারণ নাটক কবর। তিনি রচনা করেছিলেন জেলখানায় বসেই। তার অনন্য মৌলিক নাটক হচ্ছে রক্তাক্ত প্রান্তর সিটি দণ্ডকারণ্য পলাশী ব্যারাক ও আরো অন্যান্য নাটক। তার প্রকাশিত প্রবন্ধ সমালোচনা মূলক গ্রন্থের মধ্যে রয়েছে মীর মানস তুলনামূলক সমালোচনা ইত্যাদি।
বাংলা সাহিত্যে মুনীর চৌধুরীর অবদান:
মুনীর চৌধুরীর 1952 খ্রিস্টাব্দে ভাষা আন্দোলনে সক্রিয় অংশগ্রহণ করার জন্য বন্দি হন ।বন্দি থাকা অবস্থায় জেলখানায় বসে একসাথে 1953 খ্রিস্টাব্দে রচনা করেন কবর নাটক। 1951 খ্রিস্টাব্দে প্রকাশিত পূর্ববঙ্গ সরকারের ভাষা-সংস্কার কমিটির রিপোর্টের অবৈজ্ঞানিক ও সাম্প্রদায়িক বিষয়বস্তু তীব্র সমালোচনা করে ।পূর্ববঙ্গে ভাষা কমিটির রিপোর্ট আলোচনা প্রসঙ্গে একটি দীর্ঘ ভাষাতাত্ত্বিক প্রবন্ধ লেখেন। 1959 খ্রিস্টাব্দের 27 এপ্রিল প্রবন্ধটি বাংলা একাডেমিতে পতিত হয় কিন্তু মুসলিম ধর্ম বিশ্বাসের আঘাতের অভিযোগে তাকে কৈফত দিতে হয় মীর মানুষ 1965 প্রবন্ধ সংকলন এর জন্য তিনি দাউদ পুরস্কার এবং পাক-ভারত যুদ্ধ সম্পর্কে লেখা রচনা সংকলন রণাঙ্গন এর জন্য সিতারাই ইমতিয়াজ উপাধি লাভ করেন। 1967 খ্রিস্টাব্দে তিনি রেডিও ও টেলিভিশন রবীন্দ্র সংগীত প্রচারে পাকিস্তান সরকারের নিষেধাজ্ঞার প্রতিবাদ করেন 1971 খ্রিস্টাব্দে অসহযোগ আন্দোলনের সময় আন্দোলনের সমর্থনে সিতাই ইমতিয়াজ খেতাব অর্জন করেন। বাংলাদেশের স্বাধীনতা যুদ্ধকালে তিনি মে-জুন মাসে ইংরেজি বিভাগের প্রধান হিসেবে। এবং জুলাই মাস থেকে কলা অনুষদের দিন হিসাবে কাজ করেন ।1971 খ্রিস্টাব্দের 14 ই ডিসেম্বর তার বাবার বাড়ি থেকে অপহরণ করে হত্যা করা হয়।
মুনীর চৌধুরীর জীবনদৃষ্টির আধুনিকতা খানিকটা সাহিত্যপাঠজনিত, কিন্তু অনেকখানিই বামপন্থী রাজনৈতিক দীক্ষাজনিত। আর সাহিত্যপাঠের মাধ্যমে প্রাচীন গ্রিক সাহিত্য থেকে আধুনিক কালের অ্যাবসার্ড নাটক, বাংলা অনুবাদে সংস্কৃত অলংকারের অনুশীলন, বাংলা সাহিত্যের শ্রেষ্ঠ স্থপতিদের রচনার মনোযোগী পাঠ—এ সবই তাঁকে প্রণোদিত করেছিল সামনের দিকে এগোতে। আমাদের মনোজগৎকে, আমাদের জীবনবোধকে, আমাদের সাহিত্যরুচিকে সমসাময়িকদের মধ্যে তাঁর মতো আর কেউ প্রভাবান্বিত করেছিলেন বলে আমার জানা নেই।মুনীর চৌধুরী বলেছিলেন, আমরা সেই নাটক চাই, যে-নাটক আমাদের নাড়াতে পারে, বাড়াতে পারে। আজ শহিদ মুনীর চৌধুরী আমাদের মাঝে নেই, আছে তাঁর অবিনাশী নাট্যকর্ম। প্রত্যাশা রাখি, প্রজন্মের পর প্রজন্ম তাঁর নাট্যকর্মকে লালন করে নিজেদের বিকশিত করতে সমর্থ হবে।
মুনীর চৌধুরী গুণী শিক্ষক, ছাত্রদের সঙ্গে ছিল তাঁর নিবিড় সম্পর্ক। তিনি ছাত্রছাত্রীদের মান-অভিমান, আনন্দ-বেদনা, স্নেহ-ভালোবাসার আলোকে রচনা করেন নাটক চিঠি, আপনি কে?, দ-ধর। দ-কারণ্য নাট্যগ্রন্থটি উৎসর্গ করেন ছাত্রছাত্রীদের ‘কোমল কঠিন করে’। নাটক রচনার পর তিনি সমমনা সহকর্মী, ছাত্র ও স্বজনদের পড়ে শোনাতেন। শ্রোতাদের খোলামেলা মতামত প্রত্যাশা করতেন। রণেশ দাশগুপ্ত ও মমতাউদ্দীন আহমেদ কবর নাটকের শেষাংশ মূল নাটকের উত্তাপকে খানিকটা শীতল করেছে বলে মমত্মব্য করেন। উদারচেতা মুনীর চৌধুরী এর উত্তরে বলেন, প্রয়োজন হলে প্রযোজক নাটকের শেষাংশই বর্জন করতে পারেন।
মুনীর চৌধুরী এর জীবনী ও সাহিত্যকর্ম
- ’রক্তাক্ত প্রান্তর’ এর রচয়িতা – মুনীর চৌধুরী ।
- কোন সাহিত্যিক ১৯৭১ সালের ১৪ ডিসেম্বরের শহীদ বুদ্ধিজীবী – মুনীর চৌধুরী ।
- মুনীর চৌধুরীর ‘মীর মানস’ কোন জাতীয় গ্রন্থ – প্রবন্ধ ।
- ’কবর’ এটি কোন শ্রেণীর গ্রন্থ – নাটক ।
- ’কবর’ নাটকের বিষয়বস্তু – ভাষা আন্দোলন ।
- মুনীর চৌধুরী ঢাকা কেন্দ্রীয় কারাগারে থাকাকালীন যে বিখ্যাত নাটকটি লিখেছিলেন – ’কবর’ ।
- মুনীর চৌধুরীর যে নাটকটি মঞ্চায়ন করা হয় কারাগারে – ‘কবর’ ।
- ’কবর’ নাটকটি সর্বপ্রথম অভিনীত হয় – ঢাকা কেন্দ্রীয় কারাগারে ।
- মুনীর চৌধুরী অনূদিত নাটক – ‘মুখরা রমণী বশীকরণ’ ।
- মুনীর চৌধুরী বাংলা একাডেমি পুরস্কার পান – ১৯৬২ সালে ।
- তাঁর অন্যান্য পুরস্কার সমুহ – ’মীর মানস’ (দাউদ পুরস্কার-১৯৬৫ সিতারা-ই-ইমতিয়াজ খেতাব-১৯৬৬) ।
- যে নাটকের জন্য মুনির চৌধুরী বাংলা একাডেমি প্ররস্কার পান – ‘রক্তাক্ত প্রান্তর‘ ।
- ’পলাশী ব্যারক ও অন্যান্য’ এর রচয়িতা – মুনীর চৌধুরী ।
- ’দণ্ডকারণ্য’ নাটকটির রচয়িতা – মুনীর চৌধুরী ।
- ’কবর’ নাটকটি অভিনীত হয় – রাজবন্দীদের দ্বারা ।
- মুনীর চৌধুরীর অন্যান্য বিখ্যাত প্রবন্ধের মধ্যে রয়েছে – ’মীর মানস’ (১৯৬৫), তুলনামূলক সমালোচনা (১৯৬৯), বাংলা গদ্যরীতি (১৯৭০) ।
- বিখ্যাত অনুবাদককৃত নাট্যগ্রন্থ – ’মানুষ’(১৯৪৭), ‘চিঠি’ (১৯৬৬), ’কেউ কিছু বলতে পারে না’ (১৯৬৭), ‘রূপার কৌটা’ (১৯৬৯) সালে প্রকাশিত হয় ।
- মুনীর চৌধুরী এর ’মুখরা রমণী বশীকরণ’ শেক্সপিয়রের – ‘The Taming of the Shrew’-এর অনুবাদ ।
শেষ কথা:
আশা করি, এই পোস্ট আপনাদের সবার ভালো লাগবে। ভাল লাগলে অবশ্যই সবার মাঝে শেয়ার করবেন আর কিছু জানার থাকলে অবশ্যই আমাদের কমেন্ট করে জানাবেন।আর যদি এই আর্টিকেলে কোন ভুল-ভ্রান্তি হয়ে থাকে তাহলে তা ক্ষমার দৃষ্টিতে দেখবেন। আমি সব সময়ের জন্য চেষ্টা করি আপনাদের সামনে ভালো একটি আর্টিকেল পেস্ট করতে। এতক্ষন আমাদের সাথে থাকার জন্য ধন্যবাদ। সবাই ভাল থাকবেন আল্লাহ হাফেজ………………