বিসমিল্লাহির রহমানির রহিম
বিসমিল্লাহির রহমানির রাহিম প্রিয় ভিউয়ার্স আসসালামু আলাইকুম আশা করি সবাই ভাল আছেন ।আমিও ভাল আছি ।আজকে আমি আপনাদের সামনে হাজির হয়েছি মুক্তিযুদ্ধ বিষয়ক বিখ্যাত কয়েকটি কবিতা সেরা কালেকশন নিয়ে ।যারা মুক্তিযুদ্ধ বিষয়ক বিখ্যাত কয়েকটি কবিতা খুঁজছেন তাদেরকে আমার এই ওয়েবসাইটে স্বাগতম।আমি আজকে আপনাদের সাথে মুক্তিযুদ্ধ বিষয়ক বিখ্যাত কয়েকটি কবিতা নিয়ে আলোচনা করব।আশা করছি আজকের এই আলোচনা আপনাদের সবার ভালো লাগবে।
মুক্তিযুদ্ধ নিয়ে কিছু কথা :
১৯৭১ সালের মুক্তিযুদ্ধ বাঙালি জাতির ইতিহাসে সবচেয়ে বড় ঐতিহাসিক ঘটনা, কেননা এর মাধ্যমেই জাতি হিসেবে হাজার বছর ধরে গড়ে ওঠা বাঙালিরা একটি স্বাধীন ভূখণ্ডের অধিকারী হলো।আমাদের সকল প্রধান কবিই মুক্তিযুদ্ধ নিয়ে কালজয়ী কবিতা লিখেছেন। মুক্তিযুদ্ধ ঘিরে রচিত হয়েছে অজস্র আবেগী কবিতা, সংখ্যায় তারা অগণিত। এসব কবিতার ভেতরে জসিমউদ্দিনের ‘দগ্ধগ্রাম’, সুফিয়া কামালের ‘আজকের বাংলাদেশ’, আহসান হাবীবের ‘মুক্তিযোদ্ধারা দেখতে কেমন’, সিকান্দার আবু জাফরের ’বাংলা ছাড়ো’, শামসুর রাহমানের ’স্বাধীনতা তুমি’, হাসান হাফিজুর রহমানের ‘যখন উদ্যত সঙ্গীন’, সৈয়দ শামসুল হকের ‘গেরিলা’, শহীদ কাদরীর ‘নিষিদ্ধ জার্নাল’, রফিক আজাদের ‘একজন মুক্তিযোদ্ধার আত্মসমর্পণ’, নির্মলেন্দু গুণের ’স্বাধীনতা, এই শব্দটি কীভাবে আমাদের হলো’, আবুল হাসানের ‘উচ্চারণগুলি শোকের’, মুহম্মদ নূরুল হুদার ‘আমরা তামাটে জাতি’, সানাউল হক খানের ‘সাতই মার্চ একাত্তর’ মোহাম্মদ মনিরুজ্জামানের ‘শহীদ স্মরণে’, অসীম সাহার ‘পৃথিবীর সবচেয়ে মর্মঘাতী রক্তপাত’, হুমাযুন কবিরের ‘বাংলার কারবালা’, আসাদ চৌধুরীর ‘রিপোর্ট ১৯৭১’, হেলাল হাফিজের ‘নিষিদ্ধ সম্পাদকীয়’, খোন্দকার আশরাফ হোসেনের ‘বাউসী ব্রিজ ’৭১’, মহাদেব সাহার ’ফারুকের মুখ’, আবিদ আজাদের ‘এখন যে কবিতাটি লিখব আমি’, ফারুক মাহমুদের ‘রাহেলা ফুফু’, দাউদ হায়দারের ’বাংলাদেশ’, আবিদ আনোয়ারের ‘আমার মায়ের নামে তোপধ্বনি চাই’, মিনার মনসুরের ‘কী জবাব দেব’, মারুফ রায়হানের ‘সবুজ শাড়িতে লাল রক্তের ছোপ’ প্রভৃতি সহজেই স্মরণে আসে। এসব কবিতায় পাই বাঙালি জাতীয়তাবাদের চেতনা, মানবিক আবেগ, স্বদেশপ্রেম, সাম্যচেতনা, ক্ষোভ ও মুক্তির তীব্র আকাক্সক্ষা। স্মরণযোগ্য উল্লেখিত কবিরা প্রত্যেকেই মুক্তিযুদ্ধকে বিষয় করে একাধিক কবিতা লিখেছেন, এ তালিকার বাইরেও রয়েছে অনেক আবৃত্তিযোগ্য কবিতা।
মুক্তিযুদ্ধের বিখ্যাত কবিতা:
মুক্তিযুদ্ধ সবচেয়ে বেশি প্রভাবিত করেছিল সত্তর দশকের কবিদের কেননা সে সময়ে তারা সকলেই টগবগে যুবক। সত্তরের কবিতায় যে উচ্চকিত মেজাজ, রাগ ও দ্রোহ দেখা যায় তার প্রধান প্রভাবক মুক্তিযুদ্ধ। আশির দশকের কোনো কোনো কবির কবিতায় মুক্তিযুদ্ধ অঙ্কিত হলেও বেশির ভাগ কবির কবিতায় মুক্তিযুদ্ধের জোরালো উপস্থিতি নেই। নব্বই দশকে তা আরও ক্ষীয়মাণ হয়ে আসে। তবে নতুন প্রজন্মের কবিদের, যারা স্বচক্ষে মুক্তিযুদ্ধ দেখেননি, কবিতার মাঝে ফিরে আসছে মুক্তিযুদ্ধ, এর অনুষঙ্গ, নব নব আবিষ্কারে।মুক্তিযুদ্ধ সবচেয়ে বেশি প্রভাবিত করেছিল সত্তর দশকের কবিদের কেননা সে সময়ে তারা সকলেই টগবগে যুবক। সত্তরের কবিতায় যে উচ্চকিত মেজাজ, রাগ ও দ্রোহ দেখা যায় তার প্রধান প্রভাবক মুক্তিযুদ্ধ। আশির দশকের কোনো কোনো কবির কবিতায় মুক্তিযুদ্ধ অঙ্কিত হলেও বেশির ভাগ কবির কবিতায় মুক্তিযুদ্ধের জোরালো উপস্থিতি নেই। নব্বই দশকে তা আরও ক্ষীয়মাণ হয়ে আসে। তবে নতুন প্রজন্মের কবিদের, যারা স্বচক্ষে মুক্তিযুদ্ধ দেখেননি, কবিতার মাঝে ফিরে আসছে মুক্তিযুদ্ধ, এর অনুষঙ্গ, নব নব আবিষ্কারে
সেপ্টেম্বর অন যশোর রোড
শত শত চোখ আকাশটা দেখে
শত শত শত মানুষের দল
যশোর রোডের দু’ধারে বসত
বাঁশের ছাউনি, কাদামাটি জল
কাদামাটি মাখা মানুষের দল
গাদাগাদি হয়ে আকাশটা দেখে
আকাশে বসত মরা ঈশ্বর
নালিশ জানাবে ওরা বল কাকে
ঘরহীন ওরা ঘুম নেই চোখে
যুদ্ধে ছিন্ন ঘরবাড়ি দেশ
মাথার ভিতরে বোমারু বিমান
এই কালো রাত কবে হবে শেষ
শত শত মুখ হায় একাত্তর
যশোর রোড যে কত কথা বলে
এত মরা মুখ আধ মরা পায়ে
পূর্ব বাংলা কোলকাতা চলে
সময় চলেছে রাজপথ ধরে
যশোর রোডেতে মানুষ মিছিল
সেপ্টেম্বর হায় একাত্তর
গরুগাড়ি কাদা রাস্তা পিছিল
লক্ষ মানুষ ভাত চেয়ে মরে
লক্ষ মানুষ শোকে ভেসে যায়
ঘরহীন ভাসে শত শত লোক
লক্ষ জননী পাগলের প্রায়
রিফিউজি ঘরে খিদে পাওয়া শিশু
পেটগুলো সব ফুলে ফেঁপে ওঠে
এইটুকু শিশু এতবড় চোখ
দিশেহারা মা কার কাছে ছোটে
সেপ্টেম্বর হায় একাত্তর
এতো এতো শুধু মানুষের মুখ
যুদ্ধ মৃত্যু তবুও স্বপ্ন
ফসলের মাঠ ফেলে আসা সুখ
কার কাছে বলি ভাত রুটি কথা
কাকে বলি কর কর কর ত্রাণ
কাকে বলি ওগো মৃত্যু থামাও
মরে যাওয়া বুকে এনে দাও প্রাণ
কাঁদো কাঁদো তুমি মানুষের দল
তোমার শরীর ক্ষত দিয়ে ঢাকা
জননীর কোলে আধপেটা শিশু
এ কেমন বাঁচা, বেঁচে মরে থাকা
ছোট ছোট তুমি মানুষের দল
তোমার ঘরেও মৃত্যুর ছায়া
গুলিতে ছিন্ন দেহ-মন-মাটি
ঘর ছেড়েছো তো মাটি মিছে মায়া
সেপ্টেম্বর হায় একাত্তর
ঘর ভেঙ্গে গেছে যুদ্ধের ঝড়ে
যশোর রোডের দু’ধারে মানুষ
এত এত লোক শুধু কেন মরে
শত শত চোখ আকাশটা দেখে
শত শত শত শিশু মরে গেল
যশোর রোডের যুদ্ধক্ষেত্রে
ছেঁড়া সংসার সব এলোমেলো
কাদামাটি মাখা মানুষের দল
গাদাগাদি হয়ে আকাশটা দেখে
আকাশে বসত মরা ঈশ্বর
নালিশ জানাবে ওরা বল কাকে
ঘরহীন ওরা ঘুম নেই চোখে
যুদ্ধে ছিন্ন ঘর-বাড়ি-দেশ
মাথার ভিতরে বোমারু বিমান
এই কালো রাত কবে হবে শেষ
শত শত মুখ হায় একাত্তর
যশোর রোড যে কত কথা বলে
এত মরা মুখ আধ মরা পায়ে
পূর্ব বাংলা কোলকাতা চলে
এত মরা মুখ আধ মরা পায়ে
পূর্ব বাংলা কলকাতা চলে।
বাতাসে লাশের গন্ধ
আজো আমি বাতাসে লাশের গন্ধ পাই,
আজো আমি মাটিতে মৃত্যুর নগ্ননৃত্য দেখি,
ধর্ষিতার কাতর চিৎকার শুনি আজো আমি তন্দ্রার ভেতরে-
এ দেশ কি ভুলে গেছে সেই দুঃস্বপ্নের রাত, সেই রক্তাক্ত সময়?
বাতাসে লাশের গন্ধ ভাসে,
মাটিতে লেগে আছে রক্তের দাগ।
এই রক্তমাখা মটির ললাট ছুঁয়ে একদিন যারা বুক বেঁধেছিলো।
জীর্ণ জীবনের পুঁজে তারা খুঁজে নেয় নিষিদ্ধ আঁধার।
আজ তারা আলোহীন খাঁচা ভালোবেসে জেগে থাকে রাত্রির গুহায়।
এ যেন নষ্ট জন্মের লজ্জায় আড়ষ্ট কুমারী জননী,
স্বাধীনতা, -একি তবে নষ্ট জন্ম?
একি তবে পিতাহীন জননীর লজ্জার ফসল?
জাতির পতাকা খামচে ধরেছে আজ সেই পুরোনো শকুন।
বাতাশে লাশের গন্ধ-
নিয়ন আলোয় তবু নর্তকীর দেহে দোলে মাংসের তুফান।
মাটিতে রক্তের দাগ-
চালের গুদামে তবু জমা হয় অনাহারী মানুষের হাড়।
এ চোখে ঘুম আসে না। সারারাত আমার ঘুম আসে না-
তন্দ্রার ভেতরে আমি শুনি ধর্ষিতার করুণ চিৎকার,
নদীতে পানার মতো ভেসে থাকা মানুষের পচা লাশ,
মুন্ডহীন বালিকার কুকুরে খাওয়া বিভৎস শরীর
ভেসে ওঠে চোখের ভেতরে। আমি ঘুমুতে পারিনা, আমি
ঘুমোতে পারিনা-
রক্তের কাফনে মোড়া কুকুরে খেয়েছে যারে, শকুনে খেয়েছে যারে
সে আমার ভাই, সে আমার মা, সে আমার প্রিয়তম পিতা।
স্বাধীনতা, সে আমার স্বজন, হারিয়ে পাওয়া একমাত্র স্বজন-
স্বাধীনতা, সে আমার প্রিয় মানুষের রক্তে কেনা অমূল্য ফসল।
ধর্ষিতা বোনের শাড়ী ওই আমার রক্তাক্ত জাতির পতাকা।
স্বাধীনতা তুমি:
স্বাধীনতা তুমি
রবিঠাকুরের অজর কবিতা, অবিনাশী গান।
স্বাধীনতা তুমি
কাজী নজরুল ঝাঁকড়া চুলের বাবরি দোলানো
মহান পুরুষ, সৃষ্টিসুখের উল্লাসে কাঁপা-
স্বাধীনতা তুমি
শহীদ মিনারে অমর একুশে ফেব্রুয়ারির উজ্জ্বল সভা
স্বাধীনতা তুমি
পতাকা-শোভিত শ্লোগান-মুখর ঝাঁঝালো মিছিল।
স্বাধীনতা তুমি
ফসলের মাঠে কৃষকের হাসি।
স্বাধীনতা তুমি
রোদেলা দুপুরে মধ্যপুকুরে গ্রাম্য মেয়ের অবাধ সাঁতার।
স্বাধীনতা তুমি
মজুর যুবার রোদে ঝলসিত দক্ষ বাহুর গ্রন্থিল পেশী।
স্বাধীনতা তুমি
অন্ধকারের খাঁ খাঁ সীমান্তে মুক্তিসেনার চোখের ঝিলিক।
স্বাধীনতা তুমি
বটের ছায়ায় তরুণ মেধাবী শিক্ষার্থীর
শানিত কথার ঝলসানি-লাগা সতেজ ভাষণ।
স্বাধীনতা তুমি
চা-খানায় আর মাঠে-ময়দানে ঝোড়ো সংলাপ।
স্বাধীনতা তুমি
কালবোশেখীর দিগন্তজোড়া মত্ত ঝাপটা।
স্বাধীনতা তুমি
শ্রাবণে অকূল মেঘনার বুক
স্বাধীনতা তুমি পিতার কোমল জায়নামাজের উদার জমিন।
স্বাধীনতা তুমি
উঠানে ছড়ানো মায়ের শুভ্র শাড়ির কাঁপন।
স্বাধীনতা তুমি
বোনের হাতের নম্র পাতায় মেহেদীর রঙ।
স্বাধীনতা তুমি বন্ধুর হাতে তারার মতন জ্বলজ্বলে এক রাঙা পোস্টার।
স্বাধীনতা তুমি
গৃহিণীর ঘন খোলা কালো চুল,
হাওয়ায় হাওয়ায় বুনো উদ্দাম।
স্বাধীনতা তুমি
খোকার গায়ের রঙিন কোর্তা,
খুকীর অমন তুলতুলে গালে
রৌদ্রের খেলা।
স্বাধীনতা তুমি
বাগানের ঘর, কোকিলের গান,
বয়েসী বটের ঝিলিমিলি পাতা,
যেমন ইচ্ছে লেখার আমার কবিতার খাতা।
আসাদের শার্ট:
গুচ্ছ গুচ্ছ রক্তকরবীর মতো কিংবা সূর্যাস্তের
জ্বলন্ত মেঘের মতো আসাদের শার্ট
উড়ছে হাওয়ায় নীলিমায় ।
বোন তার ভায়ের অম্লান শার্টে দিয়েছে লাগিয়ে
নক্ষত্রের মতো কিছু বোতাম কখনো
হৃদয়ের সোনালী তন্তুর সূক্ষতায়
বর্ষীয়সী জননী সে-শার্ট
উঠোনের রৌদ্রে দিয়েছেন মেলে কতদিন স্নেহের বিন্যাসে ।
ডালীম গাছের মৃদু ছায়া আর রোদ্দুর- শেভিত
মায়ের উঠোন ছেড়ে এখন সে-শার্ট
শহরের প্রধান সড়কে
কারখানার চিমনি-চূড়োয়
গমগমে এভেন্যুর আনাচে কানাচে
উড়ছে, উড়ছে অবিরাম
আমাদের হৃদয়ের রৌদ্র-ঝলসিত প্রতিধ্বনিময় মাঠে,
চৈতন্যের প্রতিটি মোর্চায় ।
আমাদের দুর্বলতা, ভীরুতা কলুষ আর লজ্জা
সমস্ত দিয়েছে ঢেকে একখন্ড বস্ত্র মানবিক ;
আসাদের শার্ট আজ আমাদের প্রাণের পতাকা ।
উচ্চারণগুলি শোকের:
লক্ষ্মী বউটিকে আমি আজ আর কোথাও দেখি না,
হাঁটি হাঁটি শিশুটিকে কোথাও দেখি না;
কতগুলি রাজহাঁস দেখি,
নরম শরীর ভরা রাজহাঁস দেখি
কতগুলি মুখস্থ মানুষ দেখি, বউটিকে কোথাও দেখি না
শিশুটিকে কোথাও দেখি না।
তবে কি বউটি রাজহাঁস
তবে কি শিশুটি আজ সবুজ মাঠের সূর্য, সবুজ আকাশ?
অনেক যুদ্ধ গেল
অনেক রক্ত গেল
শিমুল তুলোর মতো সোনা-রুপো ছড়াল বাতাস।
ছোট ভাইটিকে আমি কোথাও দেখি না,
নরম নোলকপরা বোনটিকে আজ আর কোথাও দেখি না।
কেবল পতাকা দেখি,
কেবল পতাকা দেখি,
স্বাধীনতা দেখি!
তবে কি আমার ভাই আজ ওই স্বাধীন পতাকা?
তবে কি আমার বোন তিমিরের বেদিতে উৎসব?