শবে বরাত শব্দটি একটি ফার্সি শব্দ যেখানে শবে শব্দের অর্থ রাত এবং বরাত শব্দের অর্থ সম্পর্ক ছেদ বা মুক্তি অর্থাৎ শবে বরাত শব্দের অর্থ মুক্তির রাত। ইসলাম ধর্মের শবে বরাত এক মহান তাৎপর্যপূর্ণ রাত এই রাতে আল্লাহ বান্দার মনের ইচ্ছা পূরণ করে থাকেন। শবে বরাতের রাত্রে মুসলমানরা সারা রাত্রি আল্লাহর ইবাদত করেন বিনিময়ে আল্লাহ তাদের মনের ইচ্ছা পূরণ করেন। শবে বরাত কবে ২০২৩ কত তারিখে তাই ইতিমধ্যে নির্ধারিত হয়েছে। গত ২২ ফেব্রুয়ারি বাংলাদেশের পবিত্র শাবান মাসের চাঁদ দেখা গেছে সেই হিসাবে আগামী ৭ই মার্চ ( মঙ্গলবার ) বাংলা ২১ফাল্গুন দিবাগত রাত্রে বাংলাদেশের শবে বরাতের রাত।
শবে বরাতের ফজিলত
আল্লাহ এই রাতে বান্দাদের সব রকমের পাপ থেকে মুক্তি দেন তাই এই রাতের নামকরণ করা হয়েছে শবে বরাত। আল্লাহ শবে বরাতের রাতে বান্দা ক্ষমা চাইলে সব গুনাহ ক্ষমা করে দেন শুধুমাত্র মুশরিক ও হিংসুক ব্যক্তি ছাড়া। এ প্রসঙ্গে ইবনে মাজাহ রাদিয়াল্লাহু তা’আলা আনহু হতে বর্ণিত একদা রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাই সাল্লাম বলেন, আল্লাহ তয়ালা মধ্য সাবানের রাত ( শবে বরাত)। আত্মপ্রকাশ করেন এবং মুশরিক ও হিংসুক ব্যতীত তার সৃষ্টির সকলকে ক্ষমা করে দেন।
শবে বরাতের ফজিলত সম্পর্কে আরো হাদীস শরীফে আলী ইবনে আবি তালেব রাদিয়াল্লাহু তা’আলা আনহু হতে বর্ণিত তিনি বলেন রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন, যখন মধ্য সাবানের রাত আসে ( শবে বরাত) তখন তোমরা রাত জেগে নামাজ আদায় করবে আর দিনে রোজা পালন করবে। কেননা আল্লাহ তাআলা সূর্যাস্তের পর দুনিয়ার আকাশে অবতরণ করে বলেন, আছে কি কোন ক্ষমা প্রার্থনাকরী আমি তাকে ক্ষমা করব। আছে কি কোন বিপদে নিপতিত ব্যক্তি আমি তাকে সুস্থতা দান করব। এভাবে ফজর পর্যন্ত বলা হয়ে থাকে।
পরম করুনাময় অসীম দয়ালু মহান আল্লাহতায়ালা তাঁর ইবাদতের জন্য মানুষকে সৃষ্টি করেছেন।শবে বরাতের প্রচার ঘটে আমাদের প্রিয় নবী হযরত মুহাম্মদ সাল্লাহু সাল্লাম এর মাধ্যমিক থেকে। সেই থেকে প্রতিবছর মুসলমান মোমেন ব্যক্তিরা শবে বরাত পালন করে থাকেন।মার্চ ১৮, শুক্রবার শব-ইবরাত মুসলমানরা বিশ্বাস করে যে, শব-ই-বরাতের রাতে, আল্লাহ্ অতীতে তাদের দ্বারা সংঘটিত কাজের হিসাব নিয়ে আগামী বছরের জন্য সমস্ত মানুষের ভাগ্য লিখে দেন।মুসলিম ভক্তরা শবেবরাতের পুরো রাত জুড়ে বিশেষ প্রার্থনা, পবিত্র কোরআন থেকে তেলাওয়াত এবং অন্যান্য ধর্মীয় আচার পালন করবেন, মানবজাতির মঙ্গলের জন্য ঐশ্বরিক আশীর্বাদ পাওয়ার আশায়।কিছু মুসলমানদের জন্য তাদের প্রিয়জনদের কবর পরিদর্শন করা এবং তাদের আত্মার শান্তির জন্য প্রার্থনা করা শব-ই-বরাতের ঐতিহ্যের অংশ বাংলাদেশ অনেক লোক শবে বরাতের পরের দিন উপবাস করবে এবং কিছু লোক তাদের প্রতিবেশী এবং তড়িৎ রোধের খাবার এবং মিষ্টি দেবে শাবান মাসের 14 তারিখে শিয়া মুসলমানরা মোহাম্মদ আলীর জন্মদিন হিসেবেও সম্মানিত করে। যিনি মানবজাতির চূড়ান্ত ত্রাণকর্তা বলে মনে করা হয়।বারাআত নাইট, মিড শাবান, দ্য নাইট অফ রেকর্ডস, দ্য নাইট অফ ফরচুন অ্যান্ড ফরগিভেনেস নামেও পরিচিত, শব-ই-বরাত হল একটি ছুটির দিন যা ইসলামী ক্যালেন্ডারের অষ্টম মাস শা’বানের 14 তম রাতে পালন করা হয়। তুরস্কে একে বলা হয় বেরাত কান্দিলি।
শবে বরাতের নামাজের নিয়ম:
দুই রাকাত তহিয়াতুল অজুর নামাজ, নিয়ম- প্রতি রাকাতে আল হামদুলিল্লাহ (সূরা ফাতিহা) পড়ার পর , ১ বার আয়াতুল কুরসি এবং তিন বার ক্বুলহু আল্লাহ (সূরা এখলাছ)। ফজিলত: প্রতি ফোটা পানির বদলে সাতশত নেকী লিখা হবে দুই রাকাত নফল নামাজ, নিয়ম- ১ নম্বর নামাজের মত, প্রতি রাকাতে সূরা ফাতিহা পড়ার পর, ১ বার আয়াতুল কুরসি এবং ১৫ বার করে সূরা এখলাছ, অতঃপর সালাম ফিরানোর পর ১২ বার দুরূদ শরীফ। ফজিলত: রুজিতে বরকত, দুঃখ-কষ্ট হতে মুক্তি লাভ করবে, গুনাহ হতে মাগফিরাতের বকশিস পাওয়া যাবে।আট রাকাত নফল নামাজ দু’রাকাত করে পড়তে হবে, নিয়ম- প্রতি রাকাতে সূরা ফাতিহার পর, সূরা এখলাছ ৫ বার করে। একই নিয়মে বাকি সব। ফজিলত: গুনাহ থেকে পাক হবে, দু’আ কবুল হবে এবং বেশি বেশি নেকী পাওয়া যাবে।
সতর্কতাঃ
মনে রাখতে হবে ফরজ নফলের চেয়ে অনেক বড় শবে বরাতের নামাজ। যেহেতু নফল সেহেতু নফল পড়তে পড়তে ফরজ পড়া ভুলে গেলে বা ঘুমের কারণে পড়তে না পারলে কিন্তু সবই শেষ। অর্থাৎ নফল নামাজ পড়ে পড়ে ক্লান্ত হয়ে ঘুমিয়ে পড়লেন আর এই দিকে ফজরের নামাজ পড়তে পারলেন না। সাবধান এ যেন না হয়। ভাল হয় শবে বরাতের নফল শেষ করে বেতের নামাজ পড়ে এর পর ফজর পড়া। যাই করেন নামাজ পড়েন আর ঘুমান সমস্যা নেই, ঠিক সময় মত উঠে ফজর নামাজ যেন পড়তে পারেন সেই দিকে খেয়াল রাখবেন।
শেষ কথা:
আশা করি, এই পোস্ট আপনাদের সবার ভালো লাগবে। ভাল লাগলে অবশ্যই সবার মাঝে শেয়ার করবেন আর কিছু জানার থাকলে অবশ্যই আমাদের কমেন্ট করে জানাবেন।আর যদি এই আর্টিকেলে কোন ভুল-ভ্রান্তি হয়ে থাকে তাহলে তা ক্ষমার দৃষ্টিতে দেখবেন। আমি সব সময়ের জন্য চেষ্টা করি আপনাদের সামনে ভালো একটি আর্টিকেল পেস্ট করতে। এতক্ষন আমাদের সাথে থাকার জন্য ধন্যবাদ। সবাই ভাল থাকবেন আল্লাহ হাফেজ………………