ভিপি নুরুল হক নুর ১৯৯১ সালে পটুয়াখালী জেলার গলাচিপা উপজেলার চর বিশ্বাস ইউনিয়নের একটি সাধারণ মধ্যবিত্ত্ব পরিবারে জন্মগ্রহণ করেন। তার বাবার নাম ইদ্রিস হাওলাদার এবং মায়ের নাম নিলুফা বেগম। তার বাবা ছিলে একজন ব্যবসায়ী এবং ইউনিয়ন পরিষদের একজন সদস্য। পাঁচ ভাই-বোনের মধ্যে নুর হলেন দ্বিতীয়। নুরের জন্মের পাঁচ বছর পরে ১৯৯৬ সালে তার মা মারা যান।
তিনি প্রাথমিক শিক্ষা সম্পন্ন করার পর সপ্তম শ্রেণী পর্যন্ত পড়াশোনা করেন চর বিশ্বাস জনতা মাধ্যমিক বিদ্যালয়ে। এরপর ২০০৭ সালে গাজীপুরের কালিয়াকৈর গোলাম নবী মাধ্যমিক বিদ্যালয়ে অষ্টম শ্রেণীতে ভর্তি হন এবং ২০২১০ সালে সেখান থেকে বিজ্ঞান বিভাগে মাধ্যমিক শিক্ষা সম্পন্ন করেন।
উচ্চমাধ্যমিক শিক্ষার জন্য ঢাকার উত্তরা হাই স্কুল এন্ড কলেজে ভর্তি হন এবং সেখান থেকে ২০১২ সালে এইচএসসি পাশ করে ২০১৩-২০১৪ শিক্ষাবর্ষে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তি হন। এখান থেকে তিনি ইংরেজিতে অনার্স শেষ করেন। তবে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের মতো একটা শীর্ষ শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে পড়ার সুযোগ পাওয়াটা তার জন্য মোটেও সহজ ছিল না। কারণ তিনি এসএসসি ও এইচএসসি কোনো পরীক্ষাতেই জিপিএ-৫ পাননি। তবুও অত্যন্ত মেধাবী হওয়ায় তিনি তার যোগ্যতার বলে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের মতো প্রতিষ্ঠানে একটা আসন জিতে নেন।
মূলত ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়াকালীন সময়ে ছাত্র-রাজনীতির সাথে জড়িয়ে পড়েন। নুরুল হক নুর ২০১৬ সালে চরবিশ্বাস ইউনিয়নের আওয়ামী লীগ, নেতা হাতেম মাস্টারের মেয়ে মারিয়া আক্তার লুনাকে বিয়ে করেন। এবং বর্তমানে তাদের একটি কণ্যা সন্তান রয়েছে।
রাজনৈতিক জীবন
স্কুল জীবনে স্কুল কমিটির দপ্তর সম্পাদক হিসেবে নির্বাচিত হয়েছিলেন তিনি। এছাড়াও নানারকম সামাজিক, স্বেচ্ছাসেবী সংগঠন ও ক্লাবের সাথে যুক্ত ছিলেন। তবে তিনি খোলাখুলি ভাবে রাজনীতি শুরু করেন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়াকালীন সময়ে। ১৯৭২ সালে চালু হওয়া সরকারি বিভিন্ন চাকরিতে কোটা পদ্ধতির বিরুদ্ধে ২০১৮ সালে কোটা সংস্কার আন্দোলনের নেতৃত্ব দেন তিনি। এই আন্দোলন করতে গিয়ে তিনি প্রথমবার আলোচনায় আসেন এবং হামলা-মামলা সহ বেশ কয়েকবার জেল-হাজতে যেতে হয়েছে তাকে।
এরপর আন্দোলনের মুখে পড়ে সরকার কোটা পদ্ধতির সংস্কার করতে বাধ্য হয়। এতে জয় হয় নুরুল হক নুর সহ আন্দোলনকারী সকল শিক্ষার্থীদের। ২০১৮ সালের ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় কেন্দ্রীয় ছাত্র সংসদ (ডাকসু) এর সহ-সভাপতি নির্বাচিত হন নুরুল হক নুর। তিনি ১১০৬২ টি ভোট পেয়ে এই আসনে নির্বাচিত হন। আর বাংলাদেশ ছাত্র অধিকার পরিষদ হলো
বাংলাদেশের সাধারণ ছাত্রছাত্রীদের ন্যায়সঙ্গত অধিকার আদায়, সরকারি চাকরিতে কোটা ব্যবস্থার যৌক্তিক সংস্কার ও অন্যান্য বৈষম্য দূরীকরণের উদ্দ্যেশ্যে প্রতিষ্ঠিত একটি গণতান্ত্রিক ছাত্র সংগঠন।
এছাড়াও ২০১৮ সালের জুলাইয়ের “নিরাপদ সড়ক চাই” আন্দোলনেও সামনের সারিতে থেকে নেতৃত্ব দেন তিনি এবং সারা দেশাবসীর কাছে শিক্ষার্থীদের যৌক্তিক দাবীকে তুলে ধরেছেন। এসব কার্যক্রম তাকে মানুষের কাছে ব্যাপক জনপ্রিয় করে তোলে, শিক্ষার্থীরা তাকে ভরসা করতে শুরু করে। শিক্ষার্থীদের দাবী আদায়ের জন্য নানা সময়ে নানা রকম আন্দোলনের সাথে যুক্ত হন তিনি, এজন্য ছাত্রলীগ নেতাদের আক্রমনের শিকার হতে হয় এমন কি জ্ঞান হারিয়ে হাসপাতালে ভর্তিও হতে হয়েছে নুরুল হক নুরকে।
রাজনৈতিক দল গঠন
অর্থনীতিবিদ ড. রেজা কিবরিয়া ও নুরুল হক নুর মিলে একটা রাজনৈতিক দল গঠনের ঘোষণা দেন এবং ২০২১ সালের ২৬ অক্টোবার ঢাকার পল্টনের একটি কার্যালয়ে দলটির নাম ঘোষণা করেন “বাংলাদেশ গণ অধিকার পরিষদ”। তবে দুজনের সর্ম্পকে টানাপোড়নে দলটি ভেঙ্গে যাওয়ার উপক্রম হয়। সর্বশেষ ২০২৩ সালের জুলাই মাসে কাউন্সিলের মাধ্যমে নুরুল হক দলের একাংশের সভাপতি হন।