হ্যাল্লো বন্ধুরা আজকে আমি আপনাদের সামনে হাজির হয়েছি একজন স্বাধীনতা প্রিয় মানুষ এর গুরত্বপূর্ণ তথ্য নিয়ে । তিনি হলেন জহির রায়হান। জহির রায়হান নামটার সাথে আমরা সবাই পরিচিত হয়েছি তার রচিত উপন্যাস হাজার বছর উপন্যাস পড়ার মাধ্যমে।আমাদের অনেকেরই নবম দশম শ্রেণীর এই উপন্যাস টি পাঠ্য বিষয় ছিল।কিন্তু তিনি কেবলই একজন ঔপন্যাসিক নন। আধুনিক বাংলা কথাসাহিত্য কিংবা আধুনিক বাংলা চলচ্চিত্রে কারো অবদানের কথা যদি বলা হয়, তবে সবার আগে উঠে আসবে জহির রায়হানের নাম। তিনি একাধারে ছিলেন একজন সাংবাদিক, সাহিত্যিক, চলচ্চিত্র পরিচালক এবং প্রযোজক। বিনোদন ও সাহিত্য জগৎ ছাড়াও বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধে ছিল তার অসামান্য অবদান। পেশাদার জীবনের সকল ক্ষেত্রেই তিনি বাঙালির উপর অত্যাচারের চিত্র ফুটিয়ে তুলেছেন। মাত্র ৩৭ বছরের জীবনকালে তার অর্জন তাকে বাংলার ইতিহাসে অমর করে রেখেছে।
জহির রায়হানের জন্ম:
জহির রায়হানের জন্ম ১৯৩৫ সালের ১৯ আগস্ট ফেনী জেলার মজুপুর গ্রামে।
তার প্রকৃত নাম আবু আবদাল মোহাম্মদ জহিরুল্লাহ
এবং ডাকনাম জাফর।
বাবা মোহাম্মদ হাবিবুল্লাহ
মা সৈয়দা সুফিয়া খাতুন
জহির রায়হান আট সন্তানের পরিবারে তিনি ছিলেন তৃতীয়।
বাবার কলকাতার এক আলিয়া মাদ্রাসায় শিক্ষকতার কারণে তিনি পরিবার সহ কলকাতায় থাকতেন।
১৯৪৭ সালে দেশভাগের পর তারা সপরিবারে ঢাকায় ফিরে আসেন।
জহির রায়হানের ছোটবেলা:
ছোটবেলা থেকেই তিনি বাঙালি জাতির উপর চলা বর্বরতা দেখতে দেখতে বড় হয়েছেন। তার লেখনী আর চলচ্চিত্রের মাধ্যমে এগুলো অনেক স্পষ্ট ও সুন্দরভাবে ফুটিয়ে তোলা হয়েছে।কলকাতায় ক্লাস ফোর-ফাইভে পড়ার সময় বড় ভাইয়ের প্রভাবে জহির রায়হান প্রথম রাজনৈতিক সংস্পর্শে আসেন। এসময় তিনি কলকাতায় রাস্তায় রাস্তায় ‘স্বাধীনতা’ পত্রিকা বিক্রি করতেন কমিউনিস্ট পার্টির জন্য। ছোটবেলা থেকেই তার বই পড়া ও লেখালেখির অনেক শখ ছিল। মাত্র চৌদ্দ বছর বয়সে তিনি যখন হাইস্কুলের ছাত্র, তখন ‘চতুষ্কোণ’ পত্রিকায় ‘ওদের জানিয়ে দাও’ নামে প্রথম তার একটি কবিতা প্রকাশিত হয়। এটি অনেক জনপ্রিয়তা লাভ করে। তৎকালীন নিরীহ বাঙালিদের ওপর চলমান অত্যাচারের চিত্র তার কবিতায় ফুটে ওঠে।
জহির রায়হানের সাংসারিক জীবন :
জহির রায়হান ব্যক্তিজীবনে দু’বার বিবাহ বন্ধনে আবদ্ধ হন। তার প্রথম স্ত্রী ছিলেন চিত্রনায়িকা সুমিতা দেবী। তারা ১৯৬১ সালে বিয়ে করেন। প্রথম পরিবারে অনল রায়হান এবং বিপুল রায়হান নামে দুই পুত্র সন্তানের জন্ম হয়।সুমিতা দেবীর সাথে বিচ্ছেদের পর ১৯৬৮ সালে আরেক জনপ্রিয় চিত্রনায়িকা সুচন্দার সাথে তিনি বিয়ে করেন। দ্বিতীয় পরিবারে রয়েছেন তার দুই সন্তান অপু ও তপু। তার বড় ভাই প্রয়াত লেখক শহীদুল্লাহ কায়সার। তিনি জনপ্রিয় অভিনেত্রী শমী কায়সারের বাবা।
রাজনৈতিক আন্দোলনে একজন সক্রিয় সমর্থক:
১৯৬৯ সালের গণঅভ্যুত্থানের সময় তিনি আন্দোলনে যোগ দেন। এসময় বহু পত্রিকায় তার আইয়ুব খান বিরোধী লেখা ছাপতে থাকে। তার তৈরীকৃত ভাষা আন্দোলন ভিত্তিক চলচ্চিত্র ‘জীবন থেকে নেওয়া’ সরাসরি বাঙালিদের উপর পাকিস্তানি সৈন্যের বর্বরতার চিত্র ফুটিয়ে তোলে। বিখ্যাত ব্যক্তি হওয়ার কারণে ও নিজের চলচ্চিত্র ও লেখার মাধ্যমে তিনি পাকিস্তানি শাসকগোষ্ঠির ব্ল্যাকলিস্টে অন্তর্ভুক্ত হন। রাজনীতির সাথে তিনি সরাসরি যুক্ত না থাকলেও বাংলাদেশের সকল ঐতিহাসিক আন্দোলনে তিনি প্রত্যক্ষভাবে অংশগ্রহণ করেন। ১৯৫২ সালের ভাষা আন্দোলনে তিনি সক্রিয়ভাবে আন্দোলন করেছেন। ২১শে ফেব্রুয়ারির ঐতিহাসিক আমতলা মিটিংয়ে তিনি উপস্থিত ছিলেন। এসময় তাকে পুলিশ ধরে নিয়ে জেলে পুরে দেয়। এই জেলে বসেই তিনি ভাষা আন্দোলন নিয়ে তার কালজয়ী উপন্যাস ‘আরেক ফাল্গুন’ রচনা করেন।যুদ্ধ শুরুর আগে রায়হান নির্মিত ‘জীবন থেকে নেয়া’ ছিল স্বাধীকার আন্দোলনের রূপকচিত্র। তারও আগে ‘বেহুলা’ ছিল ঔপনিবেশিক পরিপ্রেক্ষিতে নির্মিত শ্রেণিদ্বন্দ্বের আলোকে নির্মিত লোকচিত্র। একটি ভূখণ্ডের রাজনৈতিক পরিস্থিতির সাথে মিলিয়ে এমন রাজনীতি সচেতন পরিচালকের দেখা পরবর্তী সময়ে বাংলাদেশে খুব একটা চোখে পড়ে না। তানভীর মোকাম্মেল ও তারেক মাসুদের কথা অবশ্য আলাদা করে বলতে হয়। এমন দুয়েকজন বাদে প্রকৃত অর্থে জহির রায়হানই বাংলাদেশের জাতীয় চলচ্চিত্র নির্মাণে একলা হাতে ভূমিকা রেখে চলেছিলেন। কিন্তু সেটা বাংলাদেশের ভেতর জাতীয় চেতনার মুখোশধারীদের সহ্য হয়নি, তাদের ভয় ছিল জহির রায়হান তাদের মুখোশ খুলে দিতে পারেন। তাই তাকে কতল করতে হয়েছিল।কিশোর বয়স থেকেই বাংলাদেশের বিভিন্ন রাজনৈতিক ঘটনার সাথে প্রত্যক্ষ বা পরোক্ষভাবে তিনি জড়িত ছিলেন। বিভিন্ন পত্রিকার সাংবাদিক থাকাকালীন তার লেখায় এসব নিয়ে তিনি বিস্তারিত আলোচনা করতেন।
প্রথম রঙিন চলচ্চিত্রের কারিগর:
জহির রায়হান একজন জনপ্রিয় কথাসাহিত্যিক। আধুনিক বাংলা কথাসাহিত্য তার কলম থেকেই যাত্রা শুরু করে। মাত্র আটটি উপন্যাস লিখেই তিনি বাংলা সাহিত্যের একজন অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ লেখক হওয়ার মর্যাদা লাভ করেন। তার রচনাগুলো ছিল জীবনমুখী। তার শ্রেষ্ঠ উপন্যাস ‘হাজার বছর ধরে’ প্রকাশিত হয় ১৯৬৪ সালে। এ উপন্যাসে গ্রামের প্রান্তিক মানুষের জীবনযাত্রাকে তিনি অসম্ভব সুন্দর করে ফুটিয়ে তুলেছেন। এছাড়া শহুরে নিম্ন মধ্যবিত্ত পরিবারের কাহিনী তিনি ফুটিয়ে তুলেছিলেন তার আরেক উপন্যাস ‘বরফ গলা নদীর’ মাধ্যমে। ১৯৫২ সালের ভাষা আন্দোলন দ্বারা অনুপ্রাণিত হয়ে তিনি রচনা করেন ‘আরেক ফাল্গুন’ এবং ‘একুশে ফেব্রুয়ারি’ নামের দুটি উপন্যাস।
মুক্তিযুদ্ধ বিষয়ক গ্রন্থ:
একাত্তরের বিজয় গাঁথা প্রবন্ধ মেজর রফিকুল ইসলাম।
একাত্তরের ঢাকা প্রবন্ধ সেলিনা হোসেন।
একাত্তরের নিশান প্রবন্ধ রাবেয়া খাতুন।
একাত্তরের ডায়েরী স্মৃতিকথা সুফিয়া কামাল।
বাংলা ও বাঙালির কথা আবুল মোমেন।
বাংলাদেশ আমার বাংলাদেশ রমেন্দ্র মজুমদার।
বাংলাদেশ কথা কয় আবদুল গাফ্ফার চৌধুরী।
মুক্তিযুদ্ধোত্তর পূর্ণদৈর্ঘ্য চলচ্চিত্র:
মুক্তির গান বাংলা (1995) তারেক মাসুদ ও ক্যাথরিন মাসুদ।
মুক্তির কথা (1995)তারেক মাসুদ ও ক্যাথরিন মাসুদ।
স্মৃতি 71 (1995) তানভীর মোকাম্মেল।
ডেটলাইন বাংলাদেশ (1971)গীতা মে হোতা।
ভাষা আন্দোলন ভিত্তিক রচনা:
কবর নাটক 1966 মুনীর চৌধুরী।
আরেক ফাল্গুন উপন্যাস 1968 জহির রায়হান।
নিরন্তর ঘন্টাধ্বনি উপন্যাস 1987 সেলিনা হোসেন।
আর্তনাদ উপন্যাস1985 শওকত ওসমান।
একুশে ফেব্রুয়ারি সম্পাদিত গ্রন্থ 1953 হাসান হাফিজুর রহমান।
বৃষ্টি গল্প ডঃ আনিসুজ্জামান।
মুক্তিযুদ্ধ বিষয়ক স্মৃতিকথা:
একাত্তরের ডায়েরী সুফিয়া কামাল।
আমি বিজয় দেখেছি এম আর আখতার মুকুল।
একাত্তরের দিনগুলি জাহানারা ইমাম।
সম্পাদিত গ্রন্থ
মুক্তিযুদ্ধের ইতিহাস হাসান হাফিজুর রহমান।
বাংলাদেশ কথা কয় শামসুর রহমান।
লক্ষ প্রাণের বিনিময়ে একাত্তরের বিজয় গাঁথা রফিকুল ইসলাম।
শেষ কথা:
আশা করি, এই পোস্ট আপনাদের সবার ভালো লাগবে। ভাল লাগলে অবশ্যই সবার মাঝে শেয়ার করবেন আর কিছু জানার থাকলে অবশ্যই আমাদের কমেন্ট করে জানাবেন।আর যদি এই আর্টিকেলে কোন ভুল-ভ্রান্তি হয়ে থাকে তাহলে তা ক্ষমার দৃষ্টিতে দেখবেন। আমি সব সময়ের জন্য চেষ্টা করি আপনাদের সামনে ভালো একটি আর্টিকেল পেস্ট করতে। এতক্ষন আমাদের সাথে থাকার জন্য ধন্যবাদ। সবাই ভাল থাকবেন আল্লাহ হাফেজ………………