এ দিন জবাই পর্বের আগেই দু’রাকাত সালাত আদায় করা হয়। একেই বলা হয় ‘ঈদুল আযহা’। এ দিনের ফজিলত সম্পর্কে অনেকেরই ধারণা নেই। অথচ কিছু আলিমের মতে, এ দিনটি বছরের সর্বোত্তম দিন। এমনকি তাদের দৃষ্টিতে আরাফাতের দিনের চেয়েও এ দিনটি উত্তম। ইমাম ইবনুল কায়্যিম বলেন, ‘আল্লাহর নিকট সর্বোত্তম দিন হলো ইয়াওমুন নাহর বা কোরবানির দিন; এটাই হলো হজ আকবারের দিন।’ আবু দাউদ বর্ণিত একটি হাদিসে রয়েছে যে, ‘আল্লাহর নিকট সর্বোত্তম দিন হলো কোরবানির দিন অতঃপর স্থিতিশীলতার দিন।’ কোরবানির দিন ১০ তারিখ আর স্থিতিশীলতার দিন হলো ১১ তারিখ। এ দিন সবাই মোটামুটি মিনায় স্থিতিশীলতার সাথে অবস্থান করেন।
কিছু আরব এবং ইসলামিক শহরে 29 জুন বুধবার অর্ধচন্দ্রের অবস্থানের জন্য, সূর্যাস্তের সময় অর্ধচন্দ্রের উপরিভাগের গণনা নিম্নরূপ: জাকার্তায়, চাঁদ সূর্যাস্তের 12 মিনিট পরে অস্ত যায়, এর বয়স 9.5 ঘন্টা এবং দৃশ্যমানতা এমনকি টেলিস্কোপ ব্যবহার করেও সম্ভব নয়। আবুধাবিতে, চাঁদ সূর্যাস্তের 31 মিনিট পরে অস্ত যায় এবং এর বয়স 14.2 ঘন্টা। রিয়াদে, চাঁদ সূর্যাস্তের 32 মিনিট পরে অস্ত যায় এবং এর বয়স 14.6 ঘন্টা। আম্মান এবং জেরুজালেমে, চাঁদ সূর্যাস্তের 37 মিনিট পরে অস্ত যায় এবং এর বয়স 15.5 ঘন্টা। কায়রোতে, চাঁদ সূর্যাস্তের 36 মিনিট পরে অস্ত যায় এবং এর বয়স 15.6 ঘন্টা। রাবাতে, চাঁদ সূর্যাস্তের 43 মিনিট পরে অস্ত যায় এবং এর বয়স 17.6 ঘন্টা। এবং আবুধাবি, রিয়াদ, আম্মান, জেরুজালেম, কায়রো এবং রাবাতে দৃষ্টি শুধুমাত্র টেলিস্কোপ ব্যবহার করে সম্ভব, যদিও এটি মধ্যপ্রাচ্যে কঠিন এবং দেখতে সক্ষম হওয়ার জন্য খুব পরিষ্কার আকাশ প্রয়োজন।
ঈদ উল আযহা বা কোরবানির দিনের গুরুত্বপূর্ণ আমল :
ইসলামী আদব-কায়দা মেনে চলা এবং হাদিসে বর্ণিত সুন্নতের অনুসরণ করা যেমন-
এক.
গোসল করা, সুগন্ধি ব্যবহার করা, সর্বোত্তম কাপড় পরা- এগুলো সুন্নত।
দুই.
ক. ঈদের সালাত ওয়াজিব। তাই ঈদের জামাতে অংশগ্রহণ করবে।
খ. মসজিদের বাইরে উন্মুক্ত ময়দানে ঈদের জামাত করা সুন্নত। তাই বিভিন্ন মসজিদের পরিচালক মিলিত হয়ে ঈদগাহ বা খোলা ময়দানে ঈদের জামাতের ব্যবস্থা করে একটি সুন্নতের ওপর আমল করার পরিবেশ তৈরি করবেন।
গ. ঈদগাহে এক পথে যাওয়া অন্য পথে ফিরে আসা সুন্নত।
ঘ. যাওয়া ও আসার পথে তাকবির বলা সুন্নত।
ঙ. ঈদের জামাত শেষে খুতবা শোনা ওয়াজিব।
তিন.
ভালো আমলের প্রতি আগ্রহী হওয়া, আত্মীয়স্বজন, পাড়া-প্রতিবেশীদের সাথে দেখা সাক্ষাৎ করে তাদের খোঁজখবর নেয়া ও কুশল বিনিময় করা।
চার.
কোরবানিকৃত পশুর গোশত দিয়ে ইফতার করা। তাই ঈদের সালাত আদায় শেষে তার জন্য অপেক্ষা করা। অবশ্য এটা কেউ এককভাবে কোরবানি করলে তার জন্য সহজ। অংশীদারিত্বে দিলেও এটা অসম্ভব নয়। প্রথমেই কিছু গোশত অংশীদারেরা ভাগ করে নিলে এ আমল করা অসম্ভব নয়।
পাঁচ.
এ দিনের সবচেয়ে বড় আমল হলো কোরবানির পশু জবাই করা। এ জন্য রয়েছে কয়েকটি বিধান কোরবানি হবে ঈদের জামাত শেষে। এর আগে কোরবানির পশু জবাই করলে তা কোরবানি হিসেবে গণ্য হবে না। কেননা হাদিসে বর্ণিত রয়েছে, ‘এ দিনের সর্বপ্রথম যে কাজটি আমরা করব তা হলো আমরা (ঈদের) সালাত আদায় করব; এরপর আমরা ফিরে এসে পশু জবাই করব। যে এভাবে করবে সে আমাদের সুন্নতপ্রাপ্ত হলো। আর যে সালাত আদায়ের আগেই জবাই করল তাহলে তা জবাইকৃত প্রাণীর গোশতে পরিণত হলো, যা সে তার পরিবারের সদস্যদের জন্য ব্যবস্থা করল’ (বুখারি : সহি)।
ছয়.
পরস্পরে দেখা হলে এ বলে মুবারকবাদ দেয়া ‘তাকাব্বালাল্লাহু মিন্না- ওয়া মিনকা’ (আল্লাহ আমাদের ও আপনাদের (আমল) কবুল করুন)। রাশিদ ইবন সা’দ বর্ণনা করেন যে, একবার এক ঈদের দিন ওয়াছিলা ইবন আসকা এবং আবু উমামা বাহিলী রা: তার সাথে দেখা করেন এবং বলেন, ‘তাকাব্বালাল্লাহু মিন্না-ওয়া মিনকা’ (আল্লাহ আমাদের ও আপনাদের (আমল) কবুল করুন) (তাবরানি : আদ দু’আ)। অন্য এক বর্ণনায় খালিদ ইবন মা’দান বর্ণনা করেন যে, একবার এক ঈদের দিন আমি ওয়াছিলা ইবন আসকার সাথে দেখা করি এবং বলি ‘তাকাব্বালাল্লাহু মিন্না-ওয়া মিনকা’ (আল্লাহ আমাদের ও আপনাদের আমল কবুল করুন)। তখন তিনি বলেন, হ্যাঁ, ‘তাকাব্বালাল্লাহু মিন্না-ওয়া মিনকা’ (আল্লাহ আমাদের ও আপনাদের আমল কবুল করুন) (বায়হাকি : আস সুনানুল কুবরা)। অন্য এক বর্ণনায় উমার ইবন আবদুল আজিজের মাওলা আদহাম বর্ণনা করেন যে, ঈদের দিন আমরা উমার ইবন আবদুল ‘আজিজকে এ বলে মুবারকবাদ দিতাম ‘তাকাব্বালাল্লাহু মিন্না-ওয়া মিনকা ইয়া আমিরাল মুমিনিন’ ( হে আমিরুল মুমিনিন! আল্লাহ আমাদের ও আপনাদের (আমল) কবুল করুন)। তখন তিনিও আমাদের উত্তর দিতেন এবং এ ব্যাপারে আমাদের নিষেধ করতেন। (বায়হাকি : শু’আবুল ঈমান)।