বিসমিল্লাহির রহমানির রাহিম
আসসালামু আলাইকুম আশা করি সবাই ভাল আছেন আমিও ভাল আছি আজকে আমি আপনাদের সামনে হাজির হয়েছি ইসলামী ব্যাংক লোন নেওয়ার পদ্ধতি বা নিয়ম নিয়ে ।আজকের এই লেখাটি শুধু মাত্র তাদের জন্য যারা আসলে ইসলামিক ব্যাংকের বেসিক জিনিসটি এখনো ক্লিয়ার হতে পারেননি। আপনি সর্বপ্রথম একটি জিনিস মনে রাখবেন যে, বাংলাদেশের কেন্দ্রীয় ব্যাংক হচ্ছে সুদযুক্ত এবং বাংলাদেশ ব্যাংক ইন্টারেস্ট নেয়। বাংলাদেশে যে ব্যাংকগুলো আছে তারা সাধারণত বিভিন্ন ভাবে এদেশের নাগরিকদের লোন বা ঋণ সুবিধা দিয়ে থাকে । বাংলাদেশে ইসলামী ব্যাংক লিমিটেড ও এর ব্যাতিক্রম নয় ।বাংলাদেশের অন্য যে কোন ব্যাংক হউক না কেন সেটা শতভাগ সুদ মুক্ত না। বর্তমান বিশ্বে এমন কোথাও এমন কোন ব্যাংক নাই যেটি ১০০% সুদ মুক্ত।বাংলাদেশে যে সমস্ত ইসলামী ব্যাংক আছে তারা তাদের নিজেদের সাধ্যমত চেষ্টা করছে সুদ মুক্ত থাকার জন্য কিন্তু বাস্তবতা হচ্ছে সেটি সম্ভব না। তবে সকল ইসলামি ব্যাংক গুলো সুদ মুক্ত হওয়ার সর্বাত্মক চেষ্টা করছে।বাংলাদেশের সকল ইসলামি ব্যাংক গুলোর কিছু দুর্বলতা আছে তারাও অন্যান্য ব্যাংকের মত ল্যাভ্যাংশ নেয় এবং তারাও অন্যান্য ব্যাংকের মত জরিমানা করে, এ ধরনের নানা অভিযোগ আছে।
তবে আজকে আমরা সেই সকল বিষয় বা অভিযোগ নিয়ে আলোচনা করব না। আমরা এখানে শুধুমাত্র ইসলামিক ব্যাংকের লোন পদ্ধতি নিয়ে আলোচনা করব।
ইসলামী ব্যাংক ব্যাক্তিগত হোম লোন:
প্রিয় ভিজিটর আপনাদের মধ্যে হয়তো অনেকের স্বপ্ন আছে নতুন একটা শখের বাড়ি করা কিন্তু টাকার অভাবে আপনার সেই স্বপ্ন পূরণ করতে পারছেন না, আর তাই আপনাদের শখের বাড়িটি তৈরিতে সাহায্য করতে, ফ্ল্যাট কিংবা তৈরি ভবন ক্রয়, বাড়ি সম্প্রসারণ সংস্কার, লিফট কিংবা জেনারেটর কেনার জন্য ইসলামী ব্যাংক দিচ্ছে সর্বোচ্চ ১ কোটি টাকা পর্যন্ত লোন সুবিধাপ্রদান করে থাকে। ইসলামী ব্যাংক বাংলাদেশ লিমিটেড ব্যাক্তিগত হোম লোন পেতে যে সকল শর্ত রয়েছে তা হল-
- নতুন ভবন নির্মাণের জন্য সম্পূর্ণ খরচের ৬০% সর্বোচ্চ ১ কোটি টাকা, ফ্ল্যাট কিংবা এপার্টমেন্ট ক্রয়ের জন্য ৫০% সর্বোচ্চ ৭৫ লক্ষ, নির্মিত বাড়ি ক্রয়ের জন্য ৫০% সর্বোচ্চ ১ কোটি টাকা লোন নিতে পারবেন।
- যারা যারা ইসলামী ব্যাংক হোম লোন নিতে পারবে তারা হল- জমির মালিক, চাকরিজীবী, ব্যবসায়ী, পেশাজীবী, প্রবাসী ও অন্যান্য বৈধ আয় করা ও লোন পরিশোধে সক্ষম হোম লোনের জন্য যোগ্য বলে বিবেচিত হইবে।
- লোন পরিষদেরে সময়কাল সর্বোচ্চ ১৫ বছর ( পরিবর্তনীয়)
- ইসলামী ব্যাংক হোম লোন নেওয়ার ক্ষেত্রে নিরাপত্তা হিসাবে যা যা প্রয়জন তা হল- জমি/ভবন/ফ্ল্যাটের নিবন্ধিত বন্ধক, ব্যাক্তিগত গ্যারান্টি, অতিরিক্ত নিরাপত্তা হিসেবে এমএসএস/টিডিআর ইত্যাদি।
- সুদের হার ১৫% বা ব্যাংক নির্ধারিত ইন্টারেস্ট রেট।
স্টুডেন্ট লোন নেয়ার পদ্ধতি:
স্টুডেন্ট লোনের আরেক নাম শিক্ষাঋণ অথবা শিক্ষা সহযোগিতা। সরাসরি শিক্ষা ঋণ বা স্টুডেন্ট লোন নামে ইসলামী ব্যাংকে এমন কিছু নেই। তবে শিক্ষার্থীদের শিক্ষা সামগ্রী ক্রয়ে অর্থ সহযোগিতা করে থাকে এই ব্যাংক। শিক্ষা সামগ্রী কেনার জন্য যে পরিমাণ অর্থের প্রয়োজন তার চার ভাগের এক ভাগ ব্যাংক কর্তৃক প্রদান করা হয়। শিক্ষা ঋণ গ্রহণের জন্য অবশ্যই শিক্ষার্থীর গার্জিয়ান সঙ্গে থাকতে হবে। শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান থেকে প্রয়োজনীয় কাগজ পত্র সংগ্রহ করে নিয়ে যেতে হবে।
শিক্ষাঋণের ইন্টারেস্ট ইসলামী ব্যাংকে 12.5%। তবে আরো দুই শতাংশ যোগ করা হয় সুপারভাইজিং চার্জ হিসেবে। সেজন্য 2% অতিরিক্ত চার্জ করে। শিক্ষাঋণের মাসিক কিস্তি সর্বোচ্চ দুই হাজার টাকা পর্যন্ত হয়।
ইসলামী ব্যাংক কার লোন:
গাড়ি কেনার স্বপ্ন সবারই থাকে। গাড়ি কিনতে আপনার আর্থিক সহায়তা প্রয়োজন হলে ইসলামী ব্যাংক আপনাকে ঋণ প্রদান করে সহায়তা করবে। আপনি যদি নতুন গাড়ি কিনতে চান সেক্ষেত্রে ব্যাংক আপনাকে সর্বোচ্চ ৩০ লক্ষ টাকা ঋণ দিবে।সেই ঋণ পরিশোধের সময়সীমা ৫ বছর পর্যন্ত হতে পারে। পুরনো গাড়ি কেনার ক্ষেত্রে সর্বোচ্চ ২০ লক্ষ টাকা ঋণ দিবে। এই ঋণ পরিশোধের সময়সীমা ৪ বছর পর্যন্ত। কার লোন এর ক্ষেত্রে সুদের হার ১৬% পর্যন্ত নির্ধারিত।
ইসলামী ব্যাংক এসএমই লোন:
আপনি যদি নিজেকে একজন উদ্যোক্তা হিসেবে প্রতিষ্ঠিত করতে চান অথবা নিজের ছোটো ব্যাবসাটিকে বড় প্রতিষ্ঠান হিসেবে দাঁড় করাতে চান তবে ইসলামী ব্যাংক থেকে এসএমই লোন নিতে পারেন। আপনার ব্যবসা প্রতিষ্ঠানের অবস্থান অনুযায়ী ঋণের টাকার পরিমাণ নির্ধারিত হবে।আপনার প্রতষ্ঠানটি যদি মহানগর অঞ্চলে অবস্থিত হয়ে থাকে এবং সেখানে প্রসার ঘটাতে চান সেক্ষেত্রে ইসলামী ব্যাংক আপনাকে সর্বোচ্চ ৫ লক্ষ টাকা পর্যন্ত ঋণ দিবে।জেলা শহরের ক্ষেত্রে ব্যাংক আপনাকে ৩ লক্ষ টাকা এবং অন্য কোনো অঞ্চল হলে ব্যাংক আপনাকে সর্বোচ্চ ২ লক্ষ টাকা পর্যন্ত ঋণ দিয়ে সহায়তা করবে। ঋণ পরিশোধের সময়সীমা ১ থেকে ২ বছর মেয়াদী হয়। এসএমই ঋণের ক্ষেত্রে সুদের হার ১২% পর্যন্ত হয়।
লোন নিতে প্রয়োজনীয় কাগজপত্র:
- ঋণ নেওয়ার জন্য ব্র্যাক ব্যাংকের নির্ধারিত আবেদনপত্র সংগ্রহ করতে হবে।
- লোন গ্রহীতার জাতীয় পরিচয়পত্রের ফটোকপি।
- লোন গ্রহীতার সদ্য তোলা পাসপোর্ট সাইজ ছবি।
- ইউটিলিটি বিল (গ্যাস বিল/পানি বিল/কারেন্ট বিল) এর কাগজের ফটোকপি।
- সেই ব্যাক্তির গত ছয় মাসের ব্যাংকের লেনদেন।
- লোন গ্রহীতার সর্বশেষ কর সনদ।
- কোনো ব্যবসায়ী ব্যাক্তি যদি অংশীদারি ব্যাবসায়ী হয় সেক্ষেত্রে লোন নিতে হলে নিবন্ধিত চুক্তিপত্র দেখাতে হবে।
- এবং লোন নিতে ইচ্ছুক ব্যাক্তির সর্বশেষ ৫ বছরের ট্রেড লাইসেন্স দেখানো প্রয়োজন হয়।
সকল ঋণের সুদের হারঃ
ইসলামী ব্যাংকের ঋণের নাম | সুদের হার | |
১. | পার্সোনাল লোন | ১৬% |
২. | হোম লোন | ৯% |
৩. | শিক্ষা ঋণ/স্টুডেন্ট লোন | ১২.৫% |
৪. | কার লোন | ১৬% |
৫. | এসএমই লোন | ১২% |
ইসলামী ব্যাংক বাংলাদেশ লিমিটেড হতে লোন পেতে আপনার নিকটস্থ যেকোন শাখায় লোন কর্মকর্তার সাথে আলাপ করুন। তবে মনে রাখবেন আলাপকালীন সময়ে লোনের পরিবর্তে তাদের বলুন যে আপনার বিনিয়োগ প্রয়োজন। যে কোন জিজ্ঞাসা থাকলে সরাসরি জিজ্ঞাসা করবেন আশা করছি তারা আপনাকে প্রয়োজনীয় তথ্য দিয়ে সম্পূর্ণ সহায়তা করবে।
বাংলাদেশে সর্বমোট ১০ টি ইসলামি ব্যাংক রয়েছে:
বাংলাদেশে সর্বমোট ১০ টি ইসলামি ব্যাংক রয়েছে যেগুলোর নাম নিচে দেওয়া হল।
- ইসলামী ব্যাংক বাংলাদেশ লিমিটেড
- আইসিবি ইসলামিক ব্যাংক লিমিটেড
- আল-আরাফাহ ইসলামী ব্যাংক লিমিটেড
- সোশ্যাল ইসলামী ব্যাংক লিমিটেড
- এক্সিম ব্যাংক (বাংলাদেশ)
- ফার্স্ট সিকিউরিটিজ ইসলামী ব্যাংক লিমিটেড
- শাহ্জালাল ইসলামী ব্যাংক লিমিটেড
- ইউনিয়ন ব্যাংক লিমিটেড
শেষ কথা:
আশাকরি আপনি ইসলামী ব্যাংক লোন পদ্ধতি সম্পর্কে পরিষ্কার ধারনা পেয়েছেন। এ ছাড়াও ইসলামি ব্যাংকের অন্যান্য যে সমস্ত লোন (ইনভেস্টমেন্ট) রয়েছে সেই সকল ইসলামী ব্যাংক লোন নেওয়ার পদ্ধতি সম্পর্কে জানতে চাইলে আমাদেরকে কমেন্ট করে জানাতে পারেন।
শেষ কথা:
আশা করি আজকের আমাদের এই পোষ্ট আপনাদের সবার ভালো লাগবে। ভালো লাগলে অবশ্যই সবার মাঝে শেয়ার করবেন।পোস্টটি সম্পুর্ণ পড়ার জন্য আমরা আপনাদের কাছে আন্তরিকভাবে কৃতজ্ঞ। আমাদের সাথে থাকার জন্য আপনাদের ধন্যবাদ।সকলেই ভালো থাকবেন আল্লাহ হাফেজ………..